সবাইকে রাজপথে নামতে হবে: মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর | ফাইল ছবি

'এক দফা' আন্দোলনে শুধু রাজনৈতিক দল নয়, সব পেশার মানুষকে 'রাস্তায় নেমে সোচ্চার হওয়া'র আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ সোমবার দুপুরে গুলশানে হোটেল লেকশোরে বিএনপির উদ্যোগে 'বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম: দুঃশাসনের দেড় দশক' শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ।

যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ডেনমার্কসহ ৭টি দেশের কূটনীতিকরা এই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে মির্জা ফখরুল বলেন, 'সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, কোনো জাতি যখন তার অধিকারের জন্য লড়াই করে, সংগ্রাম করে, তখন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হয়। সেখানে সকলে কন্ট্রিবিউট করতে হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'আজকে শুধু বিএনপি লড়াই করবে বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো লড়াই করবে, আর অন্যান্যরা বসে থাকবে—সেটা হয় না। আজকে সবাইকে নেমে আসতে হবে, সবাইকে রাজপথে নামতে হবে এবং সোচ্চার কণ্ঠে উচ্চারণ করতে হবে।'

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে এখানে যারা এসেছেন, সকলে সচেতন মানুষ। আপনারা জনমত তৈরি করুন। আজকে শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক বিশ্ব আজ আপনাদের সঙ্গে এক হয়েছে। তারা পরিষ্কার করে বলছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। তারা পরিষ্কার করে উচ্চারণ করছে, এখানে নির্বাচন হয় না, এখানে মানুষের অধিকার হরণ করা হচ্ছে, মানবাধিকার হরণ করা হচ্ছে।'

'আজকে সকলে সাহস নিয়ে, বুকে সমস্ত শক্তি নিয়ে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। আজকে আবার সেই গণতন্ত্রকে ফিরে পাওয়ার জন্য, স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করার জন্য, মানুষের অধিকারকে সুরক্ষিত করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের তরঙ্গ তুলে, উত্তাল ঢেউ তুলে এদেরকে সরাতে হবে, চলে যেতে বাধ্য করতে হবে, পদত্যাগ করতে বাধ্য করতে হবে।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'সংসদ বিলুপ্ত করে একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে আমাদেরকে নতুন পার্লামেন্ট ও নতুন সরকার দিয়ে জনগণের পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে হবে—এটাই হচ্ছে আমাদের কথা।'

তিনি বলেন, 'আজকে সর্বগ্রাসী ফ্যাসিবাদ গোটা দেশকে প্রায় গ্রাস করে ফেলেছে। এই গ্রাস করার অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে গণমাধ্যমকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা। তারা যেভাবে অপকর্ম করে, যেভাবে মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়, যেভাবে মানুষের ন্যূনতম সাংবিধানিক অধিকারগুলোও কেড়ে নেয়, সেটাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখার জন্য গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন হয়। সেটাই তারা ধীরে ধীরে সুকৌশলে করে আসছে।'

'অবৈধ সরকার তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা—বাকশালের মতো প্রতিষ্ঠা করার জন্যে পুরো আয়োজন সম্পন্ন করেছে। তারা সংবিধান পরিবর্তন করেছে। এই সংবিধান পরিবর্তন করতে গিয়ে তারা পার্লামেন্ট নিয়ন্ত্রণ করেছে, নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পুরো গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। আজকে গোটা সমাজটাকে এমন একটা জায়গায় এই সরকার নিয়ে গেছে, যেখানে এই সমাজ নিয়ে আমার বলতে আর দ্বিধা নেই যে তারা পুরো সমাজটাকে নষ্ট সমাজে পরিণত করেছে।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে ৫২ বছর পরে এসে আমাদের বলতে হচ্ছে, এখানে কোনো গণতন্ত্র নেই, গণমাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা নেই, এতোগুলো মিডিয়া আসলে চাইলেও কোনো কাজ করতে পারে না।'

তিনি বলেন, 'এখানে সুকৌশলে করপোরেট মিডিয়া তৈরি করা হয়েছে। দেখবেন, সব বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো একেকটি পত্রিকার মালিক, একেকটি টিভি চ্যানেলের মালিক। দ্যাটস হোয়াই তারা তাদের ব্যবসা এবং একই সঙ্গে সরকারের সুবিধাগুলো ভোগ করা, ব্যাংকের সুবিধা ভোগ করা, টাকা পাচারকারীদের রক্ষা করার জন্য গণমাধ্যমে করপোরেট কালচার তৈরি করেছে। খেয়াল করে দেখবেন, যখন একটি গণমাধ্যমে আরেকটি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রচার করে, তখন আসলে একজন ব্যবসায়ী আরেক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রচার করছে। সবাই কিন্তু এই ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত।'

'মূল কথা হচ্ছে, গণমাধ্যম ছাড়া মুক্ত গণমাধ্যম সম্ভব নয়। আবার গণমাধ্যমের যদি স্বাধীনতা না থাকে, তাহলে কাজ করতে পারে না। এ জন্য আমাদের সবার আগে প্রয়োজন দেশের সকলকে ঐক্যবদ্ধ করা। সেই কাজটা আমরা করছি, সব শক্তি দিয়ে সেটা করার চেষ্টা করছি', যোগ করেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এভার কেয়ার হাসপাতালে ডাক্তাররা তার জীবন-মরণ নিয়ে লড়াই করছে। সেই নেত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছে। আজকে তাকে চিকিৎসার সুযোগ পর্যন্ত দিচ্ছে না।'

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, 'যে দেশে মানুষের নিরাপত্তা নেই, সেদেশে স্বাধীনতা শব্দটাই সুদূর পরাহত একটা শব্দ মনে হয়। আমরা কি আসলেই স্বাধীন? আমার পরিবারের ওপরে যে নিপীড়ন করা হয়েছে, এখন পর্যন্ত যেভাবে ফোন দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়, প্রতি মুহূর্তে আমার পরিবারের মানুষ ভাবে আমি কি আবার গুম হয়ে যাব, আমাকে কি আবার তুলে নিয়ে যাওয়া হবে? হতেই পারে। আমি জানি না কোথায় আমার মৃত্যু হবে, কিন্তু আমার নিয়ত পরিষ্কার করেছি যে আমি সাংবাদিক, সত্য কথা বলে যাবো।'

জামালপুরে সন্ত্রাসীদের হাতে মৃত্যুবরণকারী সাংবাদিক গোলাম রাব্বানীর মেয়ে রাব্বাতুন জান্নাত বলেন, 'বকশীগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের কমিটির নেতৃত্ব পেয়েছিল ২ রাজাকারের সন্তান। এই নিউজের জের ধরে আব্বু প্রথমে প্রাণে বেঁচে গেলেও গত ১৪ জুন তারা নির্দেশ দিয়ে তাকে প্রচণ্ড মারধর করে। আব্বু গুরুতর আহত হয়ে ১৫ জুন মারা যান। আমার আব্বুর কি দোষ ছিল? এই রাজাকারের সন্তানদের বিরুদ্ধে লেখা?'

তিনি বলেন, 'আমরা তো জানি বাংলাদেশ রাজাকার মুক্ত। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেন রাজাকারের সন্তানরা দেশ শাসন করবে? রাজাকারের হাতেই আব্বু খুন হয়েছেন। রাজাকারের বিরুদ্ধে নিউজ না করলে আমার আব্বুকে মরতে হতো না। আমরা কোনো দল করি না। আমরা এখানে এসেছি আব্বুর হত্যার সঠিক বিচার চাইতে।'

Comments