চট্টগ্রাম-১০ উপনির্বাচন

দোয়া ও ভোট চেয়ে হেফাজত নেতার সঙ্গে আ. লীগ প্রার্থীর ‘বৈঠক’

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতা মুফতি হারুন বিন ইজহার ওরফে হারুন ইজহার ও তার বাবা মুফতি ইজহারুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করে দোয়া ও ভোট চেয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১০ আসনের লালখান বাজার মাদ্রাসা নামে পরিচিত জমিয়তুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার মসজিদে গতকাল বুধবার বিকেলে তিনি এ বৈঠক করেন।

মুফতি ইজহার ও তার ছেলের সঙ্গে তার বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্র।

এ ছাড়া, দ্য ডেইলি স্টার বৈঠকের একটি ছবি পেয়েছে, যেখানে লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসনাত মো. বেলালও উপস্থিত ছিলেন। মুফতি ইজহার, মহিউদ্দিন বাচ্চু ও বেলাল এক সারিতে চেয়ারে বসেছিলেন। মুফতি হারুনকে ছবিতে দেখা না গেলেও তিনি সেখানে ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্রটি।

এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু মুফতি ইজহারুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে স্বীকার করলেও মুফতি হারুন উপস্থিত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তা ছাড়া, তিনি সেখানে ভোট চাইতে গেলেও হেফাজত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেননি বলে দাবি করেছেন।

মুফতি ইজহারুল ইসলাম লালখান বাজার মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ এবং হেফাজতের সাবেক নায়েবে আমীর। তার ছেলে মুফতি হারুন ইজহার সম্প্রতি বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক।

চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও ঢাকায় দায়ের করা ২৮ মামলায় চলতি বছরের ২৩ মে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন হারুন ইজহার। এর আগে ২০২১ সালের মার্চে হাটহাজারী থানায় ভারত প্রধানন্ত্রী বিরোধী সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলার ঘটনায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৭) তাকে মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছিল।

বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রার্থী হিসেবে আমি ভোট চাইতে অনেক জায়গায় যাচ্ছি। ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে সেখানে (মসজিদে) গিয়েছিলাম। সেখানে ভোটার রয়েছে ৫ শতাধিক। আমি মুফতি হারুন ইজহারকে লক্ষ করিনি বা কোনো মিটিং করিনি।'

তবে মুফতি ইজহারুল ইসলাম সেখানে ছিলেন বলে জানান তিনি।

ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আপনি তো সবই জানেন। তারপর আমাকে কেন ফোন করেছেন?'

লালখান বাজার ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেখানে হারুন ইজহার ছিলেন না। শুধু তার বাবা মুফতি ইজহারুল ইসলাম ছিলেন।'

এ বিষয়ে জানতে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন মামলার তদন্তকারীদের তথ্যমতে, মুফতি হারুন ইজহার নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাত-উল-জিহাদের (হুজি) সক্রিয় সংগঠক হিসাবে ভুমিকা রেখেছেন। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের লালখান বাজারের একটি মাদ্রাসায় বোমা বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করেছে। ২০০৯ সালে লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনার ঘটনায় অভিযুক্ত তিনি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ২৬ মার্চ হাটহাজারীতে সংঘর্ষের পর মুফতি হারুন ইজহার তার বাহিনী নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) উপস্থিত হন। পরে তাদের আন্দোলনের মুখে চমেক হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহতদের মরদেহ দিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।

ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর আগে লালখান বাজার মাদ্রাসায় হুজি সদস্যদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল। সেখানে ২০১৩ সালে বোমা বিস্ফোরণের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে।

৩০ জুলাই অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম-১০ উপ-নির্বাচনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৮ জন। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ১৫৬টি ভোট কেন্দ্র এবং ২০১টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

গত ২ জুন চট্টগ্রাম -১০ আসনের এমপি ডা. আফসারুল আমীনের মৃত্যুতে সংসদের এই আসনটি শূন্য হয়।

Comments

The Daily Star  | English

PSC announces major changes to ease BCS recruitment process

The PSC chairman says they want to complete the entire process — from prelims to recruitment — in 12 months

6h ago