সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আ. লীগ ১০টার বেশি আসন পাবে না: মির্জা ফখরুল
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০টার বেশি আসন পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গোপীবাগে বিএনপির এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে 'হাতপাখা' প্রতীকের প্রার্থী মাওলানা ফয়জুল করিমের ওপর হামলার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই নির্বাচন কমিশন সিটি করপোরেশনের অনেকগুলো মেয়র নির্বাচন করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তিনি বলেছেন যে তিনি সন্তুষ্ট নির্বাচন নিয়ে। বরিশালে মাওলানা ফয়জুল করীমকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে…বন্ধ করতে পারেন নাই। আপনারা এত ব্যর্থ যে একজন মেয়র প্রার্থীকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে পারেন না।'
'আর আপনারা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবেন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে। পারবে? পারবে না। আমরা অনেক দেখেছি,' যোগ করেন তিনি।
'বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ' উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বেগম খালেদা জিয়াকে মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে কারাগারে রেখেছিল, তারপরে বাসায় নিয়ে গৃহবন্দি করেছিলে। গতরাতে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। অত্যন্ত অসুস্থ। সেই অবস্থায় তাকে রাত ৩টার সময় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি জীবন-মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন।'
তিনি বলেন, 'আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে সুদূরে নির্বাসিত করে রেখেছে। আমাদের এখানে এমন কোনো নেতা নেই যার বিরুদ্ধে ৪০-৫০টি মামলা নাই। ৪০ লাখ মানুষকে আসামি করে সরকার কেন? এ কারণে যে তারা জানে এই নেতারা যদি বাইরে থাকেন তাহলে কোনো নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে পেরে উঠবে না। তারা জানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা কখনোই ১০টার বেশি আসন পাবে না।'
সরকার জনগণের পকেট কাটছে
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'লোডশেডিং হচ্ছে আর বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী। এই সরকারের একটাই কাজ জনগণের পকেট কাটা। বাজারে অথবা মিটিংয়ের মধ্যে দেখেন হৈ হৈ কেউ পকেট কাটছে। পকেটমারকে ধরে ফেলেন। এখন সময় এসেছে আসল পকেটমারকে ধরার। প্রতিদিন আমাদের পকেট কেটে নিয়ে যাচ্ছে।'
'চালের দাম বাড়াচ্ছে পকেট কাটছে, তেলের দাম বাড়াচ্ছে পকেট কাটছে, লবণের দাম বাড়ছে পকেট কাটে, চিনির দাম বাড়ায় পকেট কাটে, ডালের দাম বাড়ায় পকেট কাটে, ডিমের দাম বাড়ায় পকেট কাটে, এমন একটা জিনিস নাই পকেট কাটে না। মোবাইল থেকে ৪০ শতাংশ টাকা অবলীলায় কেটে নিয়ে চলে যায়। এটাই বাস্তব চিত্র,' যোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আমরা বিদ্যুতের জন্য টাকা দেই। উত্তরা এলাকায় আগে বিদ্যুৎ কিনতে হবে তারপর ব্যবহার করতে হবে প্রিপেইড সিস্টেম। যেই ১ হাজার টাকা ভরে বিদ্যুতের কার্ড ঢুকালাম আর ৩০০ টাকা নাই। হাসিনা সরকারের ঘরে চলে গেছে।'
'আজ বিদ্যুৎ সেক্টরে ১০ জন মানুষ চিহ্নিত করেছে সাংবাদিকরা। এই ১০ জনের কাছে গোটা বিদ্যুৎখাত জিম্মি এবং বেশিরভাগ টাকা তারা বিদেশে পাচার করে পাঠিয়েছে। এক বছরে আমাদের ৭৮ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি ট্যাক্স দিতে হয়,' বলেন তিনি।
সদ্য প্রয়াত সিরাজুল আলম খান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'সিরাজুল আলম খান ক্ষণজন্মা সংগঠক। ইতিহাসে তার অবদানকে আপনারা (আওয়ামী লীগ সরকার) অস্বীকার করছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে লড়াই করেছিলেন। তাকে আপনারা শেষ সময়ে একটা মর্যাদা দিয়ে তার একটা শোকবাণী পর্যন্ত দেননি।'
'ওবায়দুল কাদের সাহেব গতকাল বলেছেন আসেন না নির্বাচনে কার কত শক্তি দেখি। আরে আপনারা আসুন না মাঠে, গদিটা ছেড়ে আসেন, পুলিশ-টুলিশ, প্রশাসন ছেড়ে আসেন। আজ সত্যিকার অর্থে একটা নির্বাচন হোক, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন তারপর দেখেন কার কত শক্তি। জনগণের শক্তি দেখতে অবশ্যই একটা সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দেন। নির্বাচন একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে, এছাড়া কোনো বিকল্প নাই,' বলেন মির্জা ফখরুল।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আয়োজনে গোপীবাগে সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশে শেষে পদযাত্রা শুরু হয়ে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব মোড়, টিকাটুলি, রাজধানী মার্কেট, স্বামীবাগ, দয়াগঞ্জ, ধোলাইখাল মোড় হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড়ে এসে শেষ হয়।
Comments