আহমদিয়াদের ওপর হামলা ক্ষমতাসীনদের কাজ: বিএনপির তদন্ত কমিটি
পঞ্চগড়ের আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলাকে 'পূর্ব পরিকল্পিত' এবং 'ক্ষমতাসীনদের কাজ' বলেছে বিএনপির গঠিত তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রধান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ রোববার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা দাবি করেছেন।
তিনি বলেছেন, 'আমরা গত ৮ তারিখে ঘটনাস্থলে গিয়েছি, ভিকটিমদের বাড়িতে গিয়েছি, কথা বলেছি। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো যারা হামলা, হত্যাকাণ্ড ও লুটপাটে অংশ নিয়েছে তাদের মধ্যে কোনো লজ্জাবোধ নেই। তারা মহাসমারোহে মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে যাদের ওপর অত্যাচার করেছে তাদের সামনে যাচ্ছে। এটাই সেখানকার বাস্তবতা।'
পঞ্চগড়ের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন বলেন, 'আমরা কয়েকজন ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে যে, এটি পরিকল্পিত এবং যারা করেছে তাদের নাম-ধামও আমাদেরকে বলেছে। তারা মোতাহার, আবদুর রহমানের নাম বলেছেন। তবে যে মামলা হয়েছে সেখানে তাদের নাম নেই। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সাহেব যখন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তখন ভিকটিমরাই তাকে (মন্ত্রীকে) বলেছেন, যারা আমাদের ঘর-বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে তারা তো আপনার সঙ্গেই আছে।'
হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল দাবি করে হাফিজ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কথা আমরা ভিকটিমদের কাছ থেকে শুনেছি। তারা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছেন। আক্রান্তদের আর্ত-চিৎকারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো বোধোদয় হয়নি। ডিসি-এসপি তিন ঘণ্টা পরে এসেছেন। এরপর তাদের মধ্যে কিছুটা উদ্যোগ শুরু হয়। এজন্য আমরা মনে করি, এটি পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। দেশে এখন যে ব্যবস্থা চলছে এর নাম মাস্তানতন্ত্র। ক্ষমতাসীনরাই এটা করছে।'
স্থানীয় প্রশাসনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'আমরা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি তথা ডিসি-এসপির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলাম। তারা দুপুর আড়াইটায় সময় দিয়েছিল। কিন্তু আমরা যাবার পর তারা বাতিল করে দেয়।'
হাফিজ অভিযোগ করে বলেন, 'যারা অপরাধ ঘটিয়েছে তাদেরকে ধরা হয় না, ধরা হয় বিএনপির নেতাকর্মীদের। ঘটনাস্থলেই ছিলেন না এমন বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনার পর হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পঞ্চগড়ের ঘটনার জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেন, 'পঞ্চগড়ের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। আমরা মনে করি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টিকে সরিয়ে দেওয়া এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল।'
তিনি বলেন, 'পঞ্চগড়ে পুলিশ ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে ১৮১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এক হাজার লোককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও আছে, পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেছে। কোনটা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়ি, কোনটা অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়ি আগের দিনই নাকি চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। যখন আক্রমণ করা হয়েছে তখন চিহ্নিত বাড়িগুলোতেই আক্রমণ করা হয়েছে।'
'আমরা এটার ঘোরতর নিন্দা করেছি প্রথম দিনই। এখনো আমরা এর নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি যে, সরকার প্রকৃত আসামিদেরকে আড়াল করবার জন্য ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার শুরু করেছে।'
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
Comments