সংসদ নির্বাচন

ইসলামী আন্দোলনকে পাশে চায় আ. লীগ-বিএনপি উভয়ই

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী পক্ষ বিএনপি উভয়ই ধর্ম-ভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে নির্বাচনী মিত্র হিসেবে পেতে চাচ্ছে। এই উদ্যোগ সফল হলে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে ভোট ব্যাংক আরও বাড়তে পারে বলে ভাবছে ২ দল।

সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে ভালো ফলাফল করে দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অর্জন করেছে 'চরমোনাইর পীর' খ্যাত সৈয়দ ফজলুল করিমের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সূত্ররা জানিয়েছেন, এসব কারণে ২ প্রধান রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠাতা ফজলুল করিমের দলের প্রতি একটাই অনুরোধ করেছেন, আর তা হল, তারা যদি মিত্র হতে না পারেন, তবে অপর দলের মিত্র না হয়ে যেন এককভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।  

১৯৮৭ সালের মার্চে বরিশাল জেলায় দলটি তাদের যাত্রা শুরু করে। সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে তারা চতুর্থ জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়।

গত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে পরাজিত করে তৃতীয় জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের মর্যাদা পায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

১৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বরিশাল সদর উপজেলায় ফজলুল করিমের সদর দপ্তরে 'চরমোনাই দরবার শরিফে' আয়োজিত বার্ষিক 'মাহফিলে' যোগ দেন।

এটি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও আলোচনায় রাজনীতি উঠে আসে এবং প্রতিনিধিরা বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ১০ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন।

তবে এই বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

পরিবর্তে, দলটি বিএনপির প্রতিনিধিদলকে জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে তাদের তীব্র আপত্তি রয়েছে, কারণ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না।

একইসঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা মনে করেন, বর্তমান ব্যবস্থায় কোনো বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় এবং তারা সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার চান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের প্রধান জহির উদ্দিন স্বপন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ১০ দফার কিছু দাবির সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের কিছু দাবি মিলে যাওয়ায় তারা দলটিকে চলমান আন্দোলনে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

'তবে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা আমাদের বলেছেন, তারা নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার চান', যোগ করেন তিনি।

অপরদিকে, আওয়ামী লীগ কয়েকটি বামপন্থী ও ইসলামপন্থী দলকে সঙ্গে নিয়ে মহাজোট সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে।

এ লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন দল ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলটিকে জোটে অন্তর্ভুক্ত করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে ২ দলের সূত্রে জানা গেছে।

তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলটির কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। এমনকি তারা বার্ষিক মাহফিলেও অংশ নেয়নি।

সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন দল মূলত ২টি কারণে আরও রাজনৈতিক দলকে তাদের জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়, তবে শরিক ও সমমনা দলগুলোর ভোট মহাজোটের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে সহায়তা করবে এবং বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে আওয়ামী লীগের শরিকরা আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে একে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হিসেবে প্রমাণ করতে সহায়তা করতে পারবে।

ইসলামী আন্দোলন দলের সূত্রে জানা গেছে, তারা সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনের সবকটিতেই প্রার্থী দিতে পারে। গত জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তারা তাদের সাংগঠনিক দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এমন কী আওয়ামী লীগ (২৬২), বিএনপি (২৫৮), জাতীয় পার্টি (৪৫) বা অন্য কোনো দল এককভাবে এতগুলো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগরী (উত্তর) সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম শরিয়ত উল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, অনেক রাজনৈতিক দল তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, কিন্তু তারা এখনো কাউকে 'ইতিবাচক সাড়া' দেয়নি।

'বরং আমরা অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছি এবং এ জন্য আমরা তাদের সঙ্গে বৈঠক করছি', যোগ করেন তিনি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো স্বতন্ত্রভাবে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সেবার দলটি ১৬০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৯টি ভোট পায়, যা মোট ভোটের ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সৈয়দ ফজলুল করিমের দলটি ২৯৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ভোট পেয়েছিল, যা ছিল মোট ভোটের ১ দশমিক ৫২ শতাংশ ভোট।

বর্তমানে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) এর অধীনে এই দল থেকে নির্বাচিত ১০ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর রয়েছেন।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments