‘নয়াপল্টনকে অস্থিতিশীল করতে সরকারের এজেন্সিগুলো নাশকতা করছে’
নয়াপল্টনকে অস্থিতিশীল করতে সরকারের এজেন্সিগুলো নাশকতা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসার সমানে সেই বালির ট্রাকের কায়দায় চেকপোস্ট ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ অবরোধ করে রেখেছে। এটি দেশনেত্রীর ওপর নিপীড়নের নতুন আরেকটি মাত্রা। আমি সরকারের এমন ঘৃণ্য আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একজন জনপ্রিয় নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে কারারুদ্ধ করে রেখে, চিকিৎসার সব পথ রুদ্ধ করে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী সরকার।
তিনি আরও বলেন, তার (বিএনপি চেয়ারপারসন) বাসভবন অবরোধ করে, জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাকে মানসিক চাপে রাখা হচ্ছে।
অবিলম্বের বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসার সামনে থেকে চেকপোস্ট ও ব্যারিকেড তুলে নেওয়ার দাবি জানান ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গতকাল রাজশাহীর সমাবেশ শেষে ঢাকায় আসার পথে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়নকে আমিন বাজার থেকে ডিবি উঠিয়ে ঢাকার দারুস সালাম থানায় নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা, অভিযোগ কিছুই নেই। শুধুমাত্র জনগণের আন্দোলনকে দমিয়ে ফেলার জন্য, ত্রাস সৃষ্টি জন্য বেআইনিভাবে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত গাড়ি এবং চালকের কোনো খবর আমরা পাইনি।
এটি সরকারের দমন-পীড়নের চরম দৃষ্টান্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তাদের মুক্ত করার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
সরকারের চক্রান্ত থেমে নেই উল্লেখ তিনি আরও বলেন, নয়াপল্টনকে অস্থিতিশীল করার জন্য সরকারের এজেন্সিগুলো নানা ধরনের নাশকতা ঘটাতে অবতীর্ণ হয়েছে। গতকাল এই কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এই বিস্ফোরণের পর পুলিশ আকস্মিকভাবে নেতা-কর্মীদের পাইকারি হারে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এখানে একটি অবস্থার সৃষ্টি করা এবং গোটা ঢাকা শহরে তারা একই কাজ শুরু করেছে। মতিঝিলে পরিত্যক্ত বিআরটিসি বাসে আগুন দিয়ে বিএনপির ওপর দায় চাপাতে গিয়ে হাতে-নাতে ধরা খেয়ে চুপসে গেছেন ওবায়দুল কাদের সাহেব। অথচ তিনি বিএনপিকে দায়ী করে তারস্বরে নাশকতার কথা বলে যাচ্ছেন। বিএনপির গণসমাবেশের কর্মসূচি জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য প্রায় মাসখানেক আগে ঢাকা জেলা আদালতে জঙ্গি নাটকের অবতারনা করা হয়। বেশ কিছু দিন চুপ থেকে এখন সেই জঙ্গি ধরার নামে মেস, আবাসিক হোটেল ও বাসাবাড়িতে পুলিশ ব্লক রেইড দিচ্ছে। পুলিশের এই হানা মূলত বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে পাইকারি হারে গ্রেপ্তার, হয়রানির ও আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য। আমি এই ঘৃণ্য চক্রান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ২০১৩-১৫ সালের পুরনো নাটকেরই পূণরাবৃত্তি করা হচ্ছে এই গণগ্রেপ্তার এবং নাশকতার ঘটনা ঘটিয়ে। চলছে মেস ও আবাসিক হোটেলে জঙ্গিদের উপস্থিতি সন্দেহে পুলিশের ঘেরাও অভিযান। আমরা যার নমুনা দেখলাম বনানীতে।
ফখরুল বলেন, এখানে আমরা এতগুলো সমাবেশ করলাম, কোথাও কোনো ঘটনা ঘটেনি। লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ। আমরা পরিষ্কার করে বলতে পারি। ঢাকায় যে সমাবেশ হবে সেটা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে। এখানে কোনো রকম নাশকতা যদি কেউ সৃষ্টি করে সেটা সরকার করবে ও তার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ সরকারকে বহন করতে হবে। পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেছেন, ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে ঘিরে নাশকতার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তাহলে কেন এই নাটক অভিযান? সরকার এক সুদূরপ্রসারী অশুভ মাস্টার প্ল্যানের পথে হাঁটছে কেন?
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ জঙ্গিদের কথা বলে দেশে জঙ্গি সৃষ্টি করতে চায়। অগ্নিসন্ত্রাসের কথা বলে অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চায়। তারা নিজেরাই চায়। সেই জন্য আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, মানুষকে প্রতারণা করার পথ থেকে সরে আসুন। ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, বাক-স্বাধীনতা; গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে চালু করুন।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে অশান্তি সৃষ্টি করা হলেও, ইতোমধ্যে বিএনপি কেন্দ্রঘোষিত গণসমাবেশ কর্মসূচি ৯টি বিভাগীয় সদরে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ বানচাল করার জন্য অবৈধ সরকার যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতাদের কথাবার্তায় ভারসাম্যহীনতার প্রভাব সুস্পষ্ট। ইতোমধ্যেই জনগণের কাছে সুষ্পষ্ট হয়েছে যে, সরকার একটি নাশকতামূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। কিন্তু সরকারের এতে কোনো লাভ হবে না। জনগণ দিবালোকের মতোই সবকিছু অবলোকন করছে।
জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি টেনে ধরতে ১০ ডিসেম্বর পল্টনে বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পেছনে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছে অবৈধ সরকার। অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশেও পুলিশ গ্রেপ্তার ও হয়রােইন করেছে, পথে পথে বাধা দিয়েছে, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সহিংস রক্তাক্ত আক্রমণ চালিয়েছে, তারপরেও জনতার স্রোততকে ঠেকাতে পারেনি। সব বাধা বিপত্তিকে প্রতিহত করে মানুষ নদী সাঁতরে, ভেলায় ভেসে এসেছে। খালি পেটে, নগ্ন পায়ে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে মানুষ এসেছে। নৌকা ও ট্রলারে দীর্ঘ নদী পথ অতিক্রম করে সমাবেশস্থলে এসেছে। মাইলের পর মাইল সাইকেল চালিয়ে এসেছে। সমাবেশ শুরু হওয়ার ২-৩ দিন আগে থেকে মানুষ সমাবেশস্থলের আশেপাশে তাবু খাটিয়ে রাত্রি যাপন করেছে।
এ সময় গত রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদেরকে গ্রেপ্তারের তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
Comments