ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ: সর্বোচ্চ সতর্ক পুলিশ-আওয়ামী লীগ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করবে আগামী ১০ ডিসেম্বর। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে 'সম্ভাব্য নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড' এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীদের নজরদারিতে রাখাসহ সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সমাবেশের আগে শহরে কোনো অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রবেশ বন্ধ করতে ইতোমধ্যেই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
বিএনপি নেতা-কর্মীরা যেন সমাবেশে যোগ দিতে না পারেন, সেজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের নেওয়া ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে, দেশের বাকি অংশ থেকে ঢাকাকে 'বিচ্ছিন্ন' করা এবং রাজধানী জুড়ে অবস্থান নেওয়া।
দেশের অন্যান্য স্থানে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের মতো ঢাকার সমাবেশের আগেও সড়কে যানবাহন বন্ধ থাকবে। আন্তঃজেলা যানবাহন ও লঞ্চ চলাচলও স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে নগরীর ভেতরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ সূত্র।
তারা বলছেন, ঢাকা সমাবেশে বিএনপি কী করবে সে সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত না থাকায় দলটি সতর্কতার সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির দাবি, নিত্যপণ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং পুলিশি অভিযানে নেতাদের মৃত্যুর প্রতিবাদে ১০টি বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিক জনসভা করছে বিএনপি।
তাদের এই সমাবেশ শেষ হবে ঢাকার সমাবেশের মধ্য দিয়ে। বিএনপির লক্ষ্য ঢাকায় অন্তত ১০ লাখ মানুষের জমায়েত করা।
সমাবেশের ঘোষণার পর বিএনপির কয়েকজন নেতা সরকার পতনের হুমকি দিলেও দলের কেন্দ্রীয় নেতারা পরবর্তীতে জানান, তাদের এমন পরিকল্পনা নেই।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, গোয়েন্দারা নগর ইউনিট থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নজরদারিতে রাখা শুরু করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই ডিএমপির আওতাধীন থানাগুলোকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে এবং অভিযোগে থাকা বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে।
অস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে কেউ যেন প্রবেশের চেষ্টা করতে না পারে সেজন্য রাজধানীর প্রবেশপথে যানবাহন ও পণ্য বোঝাই ট্রাকেও তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
বিএনপির সমাবেশ সম্পর্কে ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, সমাবেশটি পরিকল্পনা অনুযায়ী হবে কি না, তা সরকারের সিদ্ধান্ত।
দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমরা ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আমরা প্রস্তুত আছি।'
ডিএমপির কাছে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে বিএনপি।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডিএমপি পরামর্শ দিয়েছে শহরের বাইরে পূর্বাচল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠ কিংবা টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে এই সমাবেশ করতে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, 'আমাদের মহাসচিব আগেই বলেছেন, আমরা আমাদের নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চাই। আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই। এর আগেও আমরা এখানে মহাসমাবেশ করেছি। তবে এবার হবে গণসমাবেশ। আমরা আশা করি এখানেই সমাবেশ করার অনুমতি পাব।'
তবে ডিএমপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে গত সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক একই ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'বিএনপি নেতারা বারবার বলছেন, তারা তাদের সমাবেশে ১০ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটাবেন। তাই, তাদের এমন একটি জায়গায় যাওয়া উচিত, যেখানে এত লোক ধারণের সক্ষমতা আছে।'
বিএনপির ঢাকা সমাবেশের দিন সাভারে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ, যেখানে ২ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া, রাজধানীর দুটি প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় পৃথক দুটি সমাবেশের পরিকল্পনা করছে দলটি।
দলটির নেতা-কর্মীরা ঢাকা শহরকে পাহারায় রাখবে এবং প্রধান সড়ক ও এর আশেপাশের সড়কগুলোতে অবস্থান নেবে।
ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের অধীনে ২৬টি থানা ইউনিট, ৬৪টি ওয়ার্ড ও ৮০২টি ইউনিট এবং ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের অধীনে ২৪টি থানা ইউনিট, ৭৫টি ওয়ার্ড ও ৬০৫টি ইউনিটের কার্যালয়ে দলটির নেতা-কর্মীরা সমবেত হবেন।
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি ইউনিটে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেবে।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বিএনপির সমাবেশে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে চাই না। তবে আমরা তাদের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে দেব না। আমরা সংঘর্ষ এড়াতেও চেষ্টা করব।'
২ পক্ষের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের সম্ভাবনা পুলিশের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তবে তারা বলছে, উভয় পক্ষের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘর্ষ মোকাবিলায় প্রস্তুত পুলিশ।
Comments