সিলেট হবে সমাবেশের নগরী: আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী
আগামী ১৯ নভেম্বর সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ। এ গণসমাবেশ প্রসঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী।
দ্য ডেইলি স্টার: ৬ নভেম্বর রাতে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল হত্যার প্রতিবাদে বিএনপি-ছাত্রদলের মিছিল থেকে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সাজসজ্জায় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি ভাঙচুরের অভিযোগে বিএনপির ২০০-২৫০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ বলছে, সিলেট বিএনপি রাজনৈতিক সম্প্রীতি নষ্ট করতে এভাবে ভাঙচুর করেছে এবং সঠিক পথে পরিচালিত না হলে ১৯ তারিখের গণসমাবেশ প্রতিহত করা হবে। সার্বিক বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী: আমাদের একজন উদীয়মান নেতা কামালকে গাড়ি থামিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা শুনেছি, ওই এলাকায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তার পরিবার ইতোমধ্যে জড়িতদের চিহ্নিত করে মামলাও করেছে।
হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে সবাই জড়ো হন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সামনে এতবড় সমাবেশ, এর মধ্যে এরকম একটি ঘটনায় আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। পরবর্তীতে আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে রাতে কিছু করা যাবে না, সকাল ১০টায় মর্গে পোস্টমর্টেমের সময় আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেবো। এ কথাগুলো হাসপাতালে জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীদের বলি এবং নেতাকর্মীদের বাড়ি ফিরতে অনুরোধ করে আমরাও ফিরে আসি।
পরে শুনলাম যে রাতে কে বা কারা আওয়ামী লীগের পরের দিনের সম্মেলনের হলে হামলা করেছে। দিনে যখন সংবাদ এলো যে আমাদের কিছু উশৃঙ্খল নেতা-কর্মী নাকি হামলা করেছে, আমরা ওইদিনই সকালে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানাই এবং বলি যে এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে বিএনপি জড়িত না। তারপরও আমরা দেখলাম অজ্ঞাতনামা ২০০-২৫০ নেতা-কর্মীর কথা উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এটা দুঃখজনক।
সিলেট একটি সম্প্রীতির নগরী ও এখানকার সংস্কৃতি দেশের অন্য অঞ্চলের চেয়ে ভিন্ন। এখানে আমরা কোনো রাজনৈতিক দল অযাচিতভাবে একে অন্যের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করি না। আমাদের বিশ্বাস সম্প্রীতির নগরী হিসেবে অন্য রাজনৈতিক দলও রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করবে। এখানে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী রেষারেষির বিষয় আসবে না। কখনো এই সমস্ত কর্মকাণ্ড যেমন অন্য কোনো দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হামলা সমর্থন করি না এবং ভবিষ্যতেও এরকম কর্মকাণ্ডে আমাদের নেতা-কর্মীকে উৎসাহিত করব না।
আশা রাখি আমাদের কর্মসূচি নির্বিঘ্নে করতে সব মহলের সহযোগিতা পাব এবং তারপরও যদি কোনো গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দল অযাচিতভাবে আমাদের কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে তাহলে যে কোনো মূল্যে আমরা সিলেটবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কর্মসূচি সফল করবো।
ডেইলি স্টার: বিএনপির নেতা-কর্মীরা যদি হামলা না করে থাকে, তবে কারা হামলা করেছে বলে আপনার মনে হয়?
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী: আমি বিশ্বাস করি আমাদের দলের কোনো বিশৃঙ্খলাকারী এ ধরনের ঘটনা ঘটায়নি। তারপরও বিশৃঙ্খলাকারী যারা তাদের দায়ভার কখনো দল নেবে না।
আমরা সুষ্পষ্টভাবে বলতে চাই যে আমাদের নেতা-কর্মীরা হামলা করেনি। এরা বিশৃঙ্খলাকারী। এই ধরনের বড় রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অনেক পক্ষ কাজ করতে পারে।
আমাদের বিশ্বাস আমাদের নেতা-কর্মীরা দলের শৃঙ্খলা মেনেই দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে এবং অন্য কোনো দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করবে না।
ডেইলি স্টার: মামলার পর থেকে কী নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক কাজ করছে?
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী: আমি গণমাধ্যমে দেখেছি যে ৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছে এবং পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে এরা আদৌ জড়িত কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেনি ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখবে। সুতরাং এরা যে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার তা বলব না।
তবে স্বাভাবিকভাবে আমরা চাপ অনুভব করছি। চাপটা পুরো বাংলাদেশেই যে ধরনের হয় আমাদের সমাবেশগুলোকে কেন্দ্র করে। আমাদের সমাবেশকে কেন্দ্র করে এখনো দৃশ্যমান কোনো চাপ না থাকলেও কিছু চাপ রয়েছে, যেমন আমাদের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনুরোধ থাকবে আমাদের কর্মসূচি সফল করার জন্য আপনারা সহায়ক হিসেবে কাজ করবেন, অযাচিতভাবে আতঙ্ক ছড়াবেন না।
ডেইলি স্টার: এইচএসসি পরীক্ষাজনিত কারণে পুলিশি নিষেধাজ্ঞায় সমাবেশের দিন ২০ নভেম্বরের পরিবর্তে ১৯ নভেম্বরে এগিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বা প্রশাসন থেকে শেষ মুহূর্তে এই ভেন্যুর ব্যাপারে কোনো বাধার আশঙ্কা করছেন কী?
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী: আমাদের ধারণা বাধা আসবে না। কারণ এখনো বাংলাদেশে যত জায়গায় সমাবেশ হয়েছে, সবগুলোতে সমাবেশ করার সুযোগ দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ সমাবেশ অনুষ্ঠানে যতটুকু সহযোগিতা প্রয়োজন, তা দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, সিলেটেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে এধরনের সহযোগিতা পাবো।
এই মাঠটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে সিটি করপোরেশন। আমরা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অবহিত করেছি। এছাড়াও আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারকে অবহিত করেছি। আমরা আশা করি সমাবেশের তারিখে প্রশাসনিক কোনো প্রতিবন্ধকতা হবে না।
ডেইলি স্টার: দেশের অন্যান্য স্থানে সমাবেশের দুদিন আগে থেকে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মানুষ দুইদিন আগে থেকেই ভেন্যুতে অবস্থান নিয়েছে। সিলেটেও কি একই আশঙ্কা করছেন এবং যদি তা হয় তাহলে দলীয় কোনো পরিকল্পনা আছে কী?
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী: পরিবহন ধর্মঘটের আশঙ্কা থেকেই বলি, আমাদের সম্প্রীতির নগরী। এখানে মালিক শ্রমিক সবাই একে অন্যের ভাই। আমার বিশ্বাস পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা ধর্মঘটের ডাক দেবেন না।
ধর্মঘট তো বিএনপির বিরুদ্ধে করলেও সমাবেশ তো সফল হবে। কিন্তু ধর্মঘটের ডাক দিলে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটা ধর্মঘট হলে তার ভিকটিম বিএনপি হবে না, সাধারণ মানুষ হবে। পরিবহন মালিক শ্রমিকদের প্রতি অনুরোধ যাতে মানুষকে কষ্ট দিয়ে কোনো কর্মসূচি না দেন।
তবে পরিকল্পনার ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। গণসমাবেশের এখনো কিছুদিন বাকি। কয়েকদিন পরে সার্বিক অবস্থা বোঝা যাবে।
ডেইলি স্টার: সমাবেশে আপনারা আশা করছেন ৪ লাখের বেশি লোক সমাগম হবে। তা হলে মাঠের পাশাপাশি গোটা নগরীর রাস্তাঘাটেও ব্যাপক লোকসমাগম হবে। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন সমাবেশের নামে রাস্তাঘাট বন্ধ করলে প্রতিহত করা হবে। এ বিষয়কে কীভাবে দেখছেন?
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী: আমরা রাস্তাঘাট বন্ধ করব না। আমাদের ভেন্যু আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ যার আশপাশ মিলিয়ে ধারণক্ষমতা প্রায় তিন লক্ষাধিক। তাছাড়া একটা বড় সমাবেশে যারা আসবে তাদের চলাফেরার রাস্তা থাকবে কিন্তু তা সমাবেশের আওতায় পড়বে না। কিন্তু মনে হবে সিলেট নগরী একটি সমাবেশের নগরী।
আমাদের উদ্দেশ্য নয় রাস্তা বন্ধ করা, আমাদের উদ্দেশ্য নেতা-কর্মীদের সমাবেশে যোগদান করা। প্রতিহতের বিষয়টি আমরা আমলে নিচ্ছি না এবং আমরা আশা করি প্রশাসন এত অবিবেচক না যে আমাদের এই সমাবেশকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা নেবে।
ডেইলি স্টার: সমাবেশকে সামনে রেখে প্রচারণা কীভাবে করছেন? এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সাড়া কেমন পাচ্ছেন আর সমাবেশের সফলতার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী আপনি?
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী: আমরা জেলার বিভিন্ন উপজেলা ইউনিয়ন ওয়ার্ড লেভেলে যাচ্ছি, মহানগর তো আছেই। মানুষ অনেক স্বতস্ফূর্ত। আমরা যে এই কর্মসূচি করছি, তা কিন্তু ক্ষমতায় আসার জন্য। আমারা জনগণের স্বপক্ষে দাঁড়িয়েছি এবং জনগণ আমাদের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এ দেশের প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে। দেশের সম্পদ লুট হচ্ছে। এই দেশের কষ্টার্জিত অর্থ সরকার ঠিকমতো দেশ পরিচালনার সুযোগ না করে দিয়ে লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছে। এই সম্পদ লুন্ঠনের বিষয়টা আমরা জনগণকে বোঝাচ্ছি।
আমরা এই কথাগুলো বলার কারণে আমাদের অন্তত ৬ জন কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। মানুষ দেখছে ২০১৪ সালে বিনাভোটে ও ২০১৮ সালে রাতের ভোটে ক্ষমতায় আসা এই সরকার জনগণের কল্যাণে কিছু করছে না।
এ ছাড়াও আমাদের দলের চেয়ারপারসনকে মিথ্যা মামলায় কারান্তরীণ ছিলেন, এখন সুচিকিৎসা হচ্ছে না। তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় দেশে আসতে দিচ্ছে না।
প্রচারণার জন্য আমি সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলায় গিয়েছিলাম। সেখানকার মানুষজন বলছেন পুরো উপজেলার সবাই মিটিংয়ে যাবে, তা সে পায়ে হেঁটে হোক আর ট্রাকে চড়ে হোক। আমরা গিয়ে তাদেরকে না বললেও তারা আসবে। এইভাবে এত স্বতস্ফুর্ততা আমরা দেখতে পাচ্ছি।
Comments