বরিশালে বিএনপির সমাবেশের আগে সক্রিয় আওয়ামী লীগ, উত্তেজনা

বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশে বিভাগীয় গণসমাবেশের ধারাবাহিকতায় ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির সমাবেশের আগে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী এবং ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো।
বুধবার বরিশাল শহরে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেল শোডাউন। ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশে বিভাগীয় গণসমাবেশের ধারাবাহিকতায় ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির সমাবেশের আগে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী এবং ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো।

গত সোমবার শহরের ৩০টি ওয়ার্ডে একযোগে মিছিল করেছে যুবলীগসহ সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা। মঙ্গল ও বুধবার বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ও শহরের প্রধান সড়কগুলোতে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগ। মিছিল হয়েছে শ্রমিক লীগের উদ্যোগেও।

এদিকে বরিশালের আশপাশের জেলা ও উপজেলাগুলো থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা যাতে সমাবেশে না আসেন, সেজন্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় তাদের ওপর হামলা চালানো ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। সবমিলিয়ে বরিশালে এখন একপ্রকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর বলের ভাষ্য, 'যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী পালন উপলক্ষে আগামী ১১ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ হবে। এ জন্য আমরা এখানে সভা-সমাবেশ করছি। বিএনপির সভা নিয়ে আমাদের মাথাব্যাথা নেই।'

এদিকে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহমেদ মুন্নার ভাষ্য, 'বিএনপি নেতা-কর্মীরা যেন কোথাও বিশৃঙ্খলা করতে না পারে এজন্য আমরা রাজপথে সজাগ রয়েছি।'

গতকাল বুধবার দুপুরে বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে একটি মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরিমলের দাবি, ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ঘিরে মিছিল করেছেন তারা।

বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ

বরিশাল মহানগর বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, বিভাগীয় গণসমাবেশে 'জনস্রোত' ঠেকাতে 'পরিকল্পিতভাবে' বাস ও ৩ চাকার যানবাহন বন্ধের পাশাপাশি বরিশালের বানারীপাড়া ও বাকেরগঞ্জ এবং পটুয়াখালী ও ভোলার চরফ্যাশনে তাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতা-কর্মীরা যাতে সমাবেশে না আসেন, সেজন্য সবাইকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

গত ৩০ অক্টোবর বাসমালিক-শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধসহ ৫ দফা দাবিতে ৪ ও ৫ নভেম্বর সব ধরনের তিন চাকার যানের ধর্মঘট ডাকে বরিশাল জেলা মিশুক, বেবিট্যাক্সি, টেক্সিকার ও সিএনজি চালক শ্রমিক ইউনিয়ন।

এর আগে মহাসড়কে ৩ চাকার অবৈধ যান ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বন্ধের দাবিতে ৪-৫ নভেম্বর বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় বাস মালিকদের সংগঠন বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপ।

এছাড়া এই প্রতিবেদন লেখার সময় ব‌রিশাল-‌ভোলা রুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ বন্ধের খবর আসে।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাবি, বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ বানচাল করতেই চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরের মতো সরকারি দলের ইন্ধনে এই অপকৌশল নেওয়া হয়েছে।

বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে দলটির বরিশাল মহানগর কমিটির সদস্যসচিব মীর জাহেদুল কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৩১ অক্টোবর ৩০ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক মীর সাদের উপর হামলা হয়েছে। এ ছাড়া বানারীপাড়ায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহামুদল হাসানসহ ১০ থেকে ১২ জন নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের হামলায় আহত হয়েছেন।'

বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতা হারুন-অর-রশীদ সেখানে লিফলেট বিতরণের সময় পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জের অভিযোগ আনেন।

এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলাউদ্দিন মিলন বলেন, 'সেদিন জগদ্ধাত্রী পূজা চলার সময় বিএনপির ২টি গ্রুপ লিফলেট করতে গিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়।'

ভোলা জেলার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ ট্রুম্যান বলেন, 'চরফ্যাশনে আমাদের একজন কর্মীকে কোপানো হয়েছে। এছাড়া বরিশাল না যাওয়ার জন্য অনেককে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।'

এসবের বাইরে সমাবেশ সামনে রেখে বরিশালের হোটেলগুলোতে পুলিশ তল্লাশি করছে বলে জানান বিএনপি নেতারা। গতকাল বুধবার রাতেও পুলিশ স্থানীয় রোদেলা হোটেলে তল্লাশি চালায়। এ সময় মডেল থানার পরিদর্শক বিপ্লব কুমার মিত্রী জানান, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই তারা এই তল্লাশি চালাচ্ছেন।

এদিকে গতকাল বরিশালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ আনেন। এ সময় বাস ও থ্রি হুইলার ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবিও জানান তিনি।

বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।'

আর পুলিশি হয়রানির বিষয়ে বরিশালের পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলামের বক্তব্য, 'এর প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না।'

সার্বিক বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, 'এসব হামলা-হুমকি দিয়ে সমাবেশে জনস্রোত ঠেকানো যাবে না। ইতোমধ্যে বেশ কয়েক হাজার নেতা-কর্মী বরিশালে প্রবেশ করেছে।'

এ সময় বরিশালের বাইরে থেকে আসা নেতা-কর্মীদের নিজেদের বাসাবাড়িতে থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে স্থানীয় বিএনপি-নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

Comments