রাজপথ দখলের লড়াইয়ে উত্তপ্ত চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গন

বিএনপি
সীতাকুণ্ডে গত ৩০ আগস্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিএনপির বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলের রাজপথ দখলের মরিয়া প্রচেষ্টা চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনকে উত্তপ্ত করে তুলছে। বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জেলায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এবং বিএনপির নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

বিএনপি নেতারা এসব সংঘর্ষ ও হামলাকে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের প্ররোচনা বলে উল্লেখ করছেন। আর আওয়ামী লীগে নেতারা বলছেন, বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করা সচেতন নাগরিক হিসেবে তাদের কর্তব্য।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ক্ষমতাসীন দল ও সরকার বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষে উসকানি দিচ্ছে, যেন তাদের বিভিন্ন মামলার আসামি করা যায় এবং এর মাধ্যমে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয় রাখা যায় বা তারা পলাতক থাকতে বাধ্য হন।

চট্টগ্রামে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত

তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা এ ফাঁদে পা দেবেন না বলে জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি বন্দরনগরীতে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে বলে দলটির নেতারা মনে করছেন। তবে তারা বিএনপিকে এ বিষয়ে কোনো ছাড় না দেওয়ার অবস্থানে অনড়।

সূত্র জানায়, বন্দরনগরী ও চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলায় সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে বিএনপিকে রাজপথে কোনো ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির আন্দোলনের প্রতি সরকারের আচরণ ভবিষ্যতে আরও কঠোর হবে।

বিএনপি নেতাদের দাবি, গত ২৮ আগস্ট বন্দরনগরীর বাকালিয়ার বাদামতল এলাকায় বিএনপির সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের হামলায় বিএনপির অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হন। ২৬ আগস্ট বাঁশখালী উপজেলার গুনাগরী এলাকায় বিএনপির মিছিলে পুলিশের হামলায় ২৫ নেতাকর্মী আহত হন বলে দাবি করেছে বিএনপি।

তবে বাকালিয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে এবং বাঁশখালীর ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয় বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ। 

বাকালিয়ার ঘটনায় ১৫ জন আওয়ামী লীগ কর্মী আহত এবং স্থানীয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন।

অপরদিকে বাঁশখালীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে পুলিশের দাবি।

বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে বিপুল মানুষের অংশগ্রহণ দেখে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল 'ভয় পেয়েছে' এবং তাই তারা বিএনপি কর্মীদের ওপর 'নিপীড়ন' চালাচ্ছে।

চট্টগ্রামে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছি। এগুলো জনস্বার্থে কর্মসূচি। তাই সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এসব কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।'

তিনি বলেন, 'সরকার ও ক্ষমতাসীন দল যখন দেখছে যে আমাদের কর্মসূচিতে প্রচুর সাধারণ মানুষ জড়ো হচ্ছে, তখন তারা আতঙ্কিত হয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা শুরু করেছে।'

'সব হামলা পূর্বপরিকল্পিত' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার, সাধারণ নেতাকর্মীদের ভীত-সন্ত্রস্ত করা এবং ভবিষ্যতে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে নিরুৎসাহিত করা। আসলে তারা আমাদের কর্মসূচি দেখে ভয় পেয়ে গেছে।'

বিএনপি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রমাণ করে তারা ভীত হয়েছেন। তারা হামলা করে আমাদের কর্মীদের ভয় দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা তাদের ভীরু মুখগুলো দেখে ফেলেছি এবং তাই আমাদের কর্মীরা এখন আরও বেশি সাহসী।'

তিনি বলেন, 'পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষে জড়ানোর জন্য উস্কানি দিচ্ছে, যেন তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পাইকারিভাবে মিথ্যা মামলা দিতে পারে। কিন্তু আমরা তাদের পাতা ফাঁদে পা দেবো না।'

আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বন্দরনগরীর ১৫টি থানা সাংগঠনিক কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে রাজপথে বিএনপির আন্দোলন কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেন।

চট্টগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক দলের র‍্যালি। ছবি: সংগৃহীত

গত ৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্বপন অবিলম্বে ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে সংগঠনকে তৃণমূলে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন বলে আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে আন্দোলন সংগঠিত করতে বিএনপির হাতে কোনো ইস্যু নেই। তাই দলটি অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।'

তিনি বলেন, 'বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে যদি তারা আন্দোলনের নামে নগরীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাহলে তা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করা সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্য।'

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, 'বিএনপি আন্দোলনের নামে কোনো প্রকার অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে, সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে তা মোকাবিলা করা হবে।'

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

9h ago