বঙ্গমাতার জীবন থেকে সারা বিশ্বের নারীরা শিক্ষা নিতে পারবে: প্রধানমন্ত্রী

prdhaanmntrii1.jpg
ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মহিয়সী নারী বঙ্গমাতার জীবন থেকে শুধু আমাদের দেশেরই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নারীরাও এই শিক্ষা নিতে পারবে যে, কীভাবে একটি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তিনি জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি মনে করি, আমাদের দেশের মেয়েরা শুধু নয়, পৃথিবীর অনেক মেয়েরাই তার জীবনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে পারবে।'

আজ রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'বঙ্গমাতা আ প্যারাগন অব ওমেন্স লিডারশিপ অ্যান্ড নেশন বিল্ডিং ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন।

একইসঙ্গে তিনি 'বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমমেন্ট স্টাডিজেরও উদ্বোধন করেন।

আগামী ৮ আগস্ট বঙ্গমাতার জন্মদিনকে সামনে রেখে বঙ্গমাতার অবদান এবং জীবন দর্শন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমমেন্ট স্টাডিজ' ২ দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমার বাবার পাশে থেকে আমার মা এই সাহস দেখিয়েছেন যে, একজন মানুষ কিভাবে তার জীবনের সব কিছু ত্যাগ করেছিলেন একটি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য।'

তিনি বলেন, বঙ্গমাতা সংসারের বিষয়ে, রাজনীতির বিষয়ে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই যখন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা আমাদের দেশের জন্য সব সময় সঠিক ও সময়োপযোগী প্রতীয়মান হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি তার জীবনটাও দিয়ে গেলেন। মা'র জীবনে কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। তিনি নিজের জন্য কোনো দিন কিছু চাননি। আমরা শুনিনি তিনি কোনো আবদার করেছেন। তার নিজের যেটুকু ছিল সবই তিনি বিলিয়ে দিতেন। দলের জন্য, মানুষের জন্য, গরীব আত্মীয় পরিবার-পরিজনের জন্য।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশ ও স্বাধীনতার জন্য আমার বাবার যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের সারথি ছিলেন আমার মা। সব সময় আমার মা সাহস যুগিয়েছেন। তবে দেশ ও মানুষের জন্য আমার মায়ের যে আত্মত্যাগ, তা খুব কমই উঠে এসেছে।

তিনি বলেন, আন্দোলন সংগ্রামের জন্য বাবা বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকলেও কখনোই বিরক্ত করতেন না। মা বলতেন, আমি দেখব তুমি চিন্তা করো না। সংসার সামলানোর পাশাপাশি জাতির পিতার অনেক সময়োচিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও বঙ্গমাতার পরামর্শ নিতেন। এতে আন্দোলন-সংগ্রামে গতির সঞ্চার করেছিল।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বা মুচলেকা দিয়ে আইয়ুব খানের ডাকা গোলটেবিলে যোগ দেওয়া সর্ম্পকিত দলের কিছু নেতার সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে বঙ্গবন্ধুর কাছে বার্তা পাঠিয়ে অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেন বঙ্গমাতা।

তার কথা ছিল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, সব আসামিকে মুক্তি দিতে হবে, মুক্ত মানুষ হিসেবেই শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্টের (পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান) সঙ্গে কথা বলতে যাবেন, বন্দি হিসেবে যাবেন না, তার মায়ের এই উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, তার মা সে সময় তাকেই ডিক্টেশন দিয়ে জাতির পিতার কাছে (ক্যান্টনমেন্টের কারাগারে) পাঠিয়েছিলেন এবং তার ইশারায় বাবা কাছে এলে মায়ের সেই বার্তা পৌঁছে দেন তিনি। এ জন্য সে সময়ের আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতাদের থেকে তার মা এবং তাকে দোষারোপ করা হয় কিন্তু তার মায়ের মধ্যে তখন তিনি যে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস দেখেছিলেন তা বাংলার মুক্তির সংগ্রামকে অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

৬ দফা ঘোষণার পর জাতির পিতা কারাগারে গেলে দাবি ৮ দফা করার জন্যও দলের ভেতরে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল, কিন্তু তার মা ৬ দফাতেই অটল ছিলেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, যে ভাষণ আজকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে ইউনেস্কোর প্রামাণ্য দলিলে স্থান করে নিয়েছে এবং বাঙালি তার মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই ভাষণ দেওয়ার সময়ও তার মায়ের সুচিন্তিত পরামর্শ এবং জাতির পিতাকে আস্থা ও ভরসা প্রদানের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তার মা সে সময় তার বাবাকে বলেছিলেন, 'তুমি সারা জীবন সংগ্রাম করেছো, এ দেশের মানুষ কি চায় তুমি জানো, কাজেই তোমার মনে যেটা আসে তুমি সেটাই বলবা। কারো কথা শুনতে হবে না,' উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঘাতক কারা? এরা তো আমাদের বাসায় অহরত যেত। আমার মা সবাইকে আপ্যায়ন করতেন। তারা ঘাতক হয়ে আসলো।

বঙ্গমাতার সাহসিকতা ও ত্যাগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যখন আমার আব্বাকে গুলি করলো আমার মা কিন্তু জীবন ভিক্ষা চায়নি। এই পরিস্থিতিতে সাধারণত মানুষ নিজের জীবন ভিক্ষা চায়। আমার মা ভিক্ষা চায়নি। মা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, উনাকে যখন হত্যা করেছো আমাকেও হত্যা করো। তখন ঘাতকের বুলেট তাকে কেড়ে নেয়।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

12h ago