এই সরকার অস্থায়ী সরকার, এর স্থায়ী কোনো ম্যান্ডেট নেই: আনু মুহাম্মদ

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে কেমন বাজেট চাই?’ শীর্ষক সভায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ছবি: সংগৃহীত

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অস্থায়ী সরকার, এর স্থায়ী কোনো ম্যান্ডেট নেই।

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত 'গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে কেমন বাজেট চাই?' শীর্ষক সভায় এ কথা বলেন তিনি।

সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জুলাই থেকে জুন অর্থবছর ব্রিটিশ আমলে প্রচলিত অর্থবছর যা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়াসহ কিছু দেশে এখনো চলমান। কিন্ত বিভিন্ন দেশ তাদের নিজেদের প্রয়োজন ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে অর্থবছর পরিবর্তন করেছে। আমাদের দেশেও জুলাই থেকে জুনের পরিবর্তে বাংলা সাল বৈশাখ থেকে চৈত্র কিংবা জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরে অর্থবছর পরিবর্তন করা যায়।'

তিনি বলেন, 'এই সরকারের কাজ ছিল বৈষম্যবিহীন বাংলাদেশ নির্মাণের গতিমুখ ঠিক করা। এই সরকার অস্থায়ী সরকার, এর স্থায়ী কোনো ম্যান্ডেট নেই। সুতরাং তার পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব না।'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক বলেন, 'সরকারের সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট হয়েছে, কিছু সংস্কারের প্রত্যাশা রয়েছে এবং কিছু করণীয় আছে, যেগুলো তারা খুব সহজেই করতে পারে। যেমন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রাথমিক এবং বহু বছরের দাবি যা বর্তমানে মোট বাজেটের ৫-৬ ভাগ যা থাকা উচিত তা বরাদ্দ থাকে ১-২ ভাগ, যা বিশ্বের সব দেশের সবচেয়ে কম।'

'এই অর্থবছরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ করে সরকার জনগণের স্বার্থে সংস্কারের কিছু নমুনার সূচনা করতে পারে। গুণগত মানকেও বৃদ্ধি করতে পারে। বরাদ্দকৃত অর্থে অপ্রয়োজনীয় খরচ ও প্রকল্প, অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং দুর্নীতি আছে। এগুলো দূর করতে হলে পূর্ণাঙ্গ বাজেট খরচের খাতসহ জনগণের সামনে উন্মুক্ত করতে হবে,' বলেন তিনি।

আনু মুহাম্মদ বলেন, 'একটা সংস্কার খুব সহজ ছিল যে, প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে উপদেষ্টা প্রতিনিধি, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সবার শিক্ষা ও চিকিৎসা পাবলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে বাধ্যতামূলক করা। তাহলেই পাবলিক শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের চেহারা বদলে যেত। বাজেটের আগে এই ধরনের ঘোষণা হলে বরাদ্দের গুণগত পরিবর্তন হওয়া খুবই সহজ হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকারের আরেকটা কাজ হচ্ছে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি। জাতীয় সক্ষমতার ভিত্তিতে একটি দেশকে অগ্রসর হতে হবে। বিগত সরকার বাহাদুরি করে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা দিয়ে স্যাটেলাইট কিনল। এটি করে তো কোনো দেশ অগ্রসর হতে পারে না। তার চেয়ে এর একাংশ টাকা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিজ্ঞান গবেষণায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের গবেষণায় ব্যয় করলে জাতীয় সক্ষমতা নিশ্চিত হতো।'

'অন্তর্বর্তী সরকার বলছে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দিতে হবে, করিডোর করতে হবে কিংবা স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে, যা জাতীয় সক্ষমতার বিপরীতে হাজির করা হচ্ছে। বিদেশি কোম্পানি আনতেই হবে, এই বিষয়ে দৃঢ়তা না দেখিয়ে সরকার যদি চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব প্রাতিষ্ঠানিক অক্ষমতা রয়েছে তা দূর করতে কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে দৃঢ়তা দেখাতো তবে জাতীয় সক্ষমতা বজায় থাকবে এবং সেটিই স্থিতিশীল প্রভাব ফেলবে,' বলেন তিনি।

সভায় কৃষি বাজেট নিয়ে শিক্ষক ও গবেষক মাহা মির্জা, জ্বালানি বাজেট নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, শিক্ষা বাজেট নিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট সালমান সিদ্দিক, চিকিৎসা বাজেট নিয়ে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ডা. হারুন উর রশীদ, বাজেটে বৈষম্য ও সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে কল্লোল মোস্তফা বক্তব্য দেন।

Comments

The Daily Star  | English

NBR activities disrupted as officials continue work abstention

This marks the ninth day of protests since the interim government issued the ordinance on May 12

32m ago