ছয় দফা দাবি

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ‘রাইজ ইন রেড’ কর্মসূচি শুরু

ঢাকা সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের গেইটে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

সারাদেশে 'রাইজ ইন রেড' কর্মসূচি শুরু করেছে ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীদের জোট কারিগরি ছাত্র আন্দোলন।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন করতে দেখা গেছে।

ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

সেখানে কথা হয় কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সাব্বির আহমেদের সঙ্গে।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ 'রাইজ ইন রেড' কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মূল ফটক লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে। পাশাপাশি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে সড়কের দুই পাশে বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্ল্যাকার্ড হাতে মানববন্ধন হবে।'

ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

সরকার দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চলবে বলেও জানান তিনি।

একই দাবিতে গতকাল কাফনের কাপড় পরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা। সারাদেশেও এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

গত বুধবার ছয় দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সড়ক আটকে রাখায় তীব্র যানজটে পড়ে দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। পরে তারা সারাদেশে বৃহস্পতিবার 'রেল ব্লকেড' বা রেলপথ অবরোধ করার ঘোষণা দেন। কিন্তু গতকাল সকালে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের বৈঠক আছে। বৈঠকের আগপর্যন্ত রেল ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল থাকবে।

ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক থাকায় শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) দুপুর পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে ছিলেন না। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলামও ঢাকার বাইরে ছিলেন। এ অবস্থায় অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াছমিনের সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল। দুপুর ১২টার দিকে বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা ৩টার দিকে।

এই আলোচনায় শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হননি। এ অবস্থায় তারা আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মশালমিছিল করেন তারা। 

পরে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে 'কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ' নামের পেজে পোস্ট ও ভিডিওতে উল্লেখ করা হয়, 'শুক্রবার বাদ জুম্মা সারা বাংলাদেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট একযোগে "৮৭ এর কাফন আন্দোলন" এর ন্যায় কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে গণমিছিল করবে।'

ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে এক নম্বর হচ্ছে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে। 

দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে। 

তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

শিক্ষার্থীদের চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। 

পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র 'কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা' মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও 'কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন' গঠন করতে হবে।

আর ষষ্ঠ দাবি, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

India curbs import of Bangladeshi jute, woven fabrics, yarn

However, the products will be allowed to be imported only through Nhava Sheva seaport in Maharashtra

1h ago