পঙ্গু হাসপাতালের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের সড়ক অবরোধ

আজ শনিবার রাতে শ্যামলীতে পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা | ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

সুচিকিৎসা, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে রাজধানীর শ্যামলীতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনের সড়ক অবরোধ করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা।

আজ শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সামনের রাস্তায় নেমে আসেন।

এতে আগারগাঁও থেকে শিশু মেলা লিংক রোড হয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কেবলমাত্র অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে।

আজ শনিবার রাতে শ্যামলীতে পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা | ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

এদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত শতাধিক ব্যক্তি রাস্তায় নেমে আসেন।

কেউ কেউ এসেছেন লাঠি ভর করে। দাবি আদায়ে তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। অনেকে রাস্তায় শুয়ে স্লোগান দিচ্ছেন।

গত বছরের ১৯ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বর সেকশন গোলচত্বরে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন মো. রফিকুল ইসলাম। ৩০ বছর বয়সী এই যুবকের বাম চোখে গুলি লাগে। বর্তমানে তিনি জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ পর্যন্ত আমার চোখে তিনবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। বাম চোখে এখনো আমি ঝাপসা দেখি। ধীরে ধীরে ডান চোখেও কম দেখছি।'

আজ শনিবার রাতে শ্যামলীতে পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা | ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

'আমাদের উন্নত চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর কথা বলা হয়েছিল। আমার দৃষ্টি কমে আসছে, অথচ সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণের কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না,' যোগ করেন তিনি।

রফিকুল আরও বলেন, 'এখানে যে চিকিৎসা পাচ্ছি, সেটা পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে না। আমরা যারা দেশের প্রয়োজনে আহত হয়েছি, অনেকের অঙ্গহানী হয়েছে, রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। কেবল মুখে মুখে প্রতিশ্রুতি আমরা চাই না।'

এ সময় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হিসেবে সনদ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

আজ শনিবার রাতে শ্যামলীতে পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা | ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

হাসপাতালের সামনে রাস্তায় টুল পেতে বসে ছিলেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তাঁত শ্রমিক মো. ইমরান। গত ৪ আগস্ট পুলিশের গুলিতে তার ডান পায়ের হাড় ভেঙে যায়।

প্রথমে তিনি স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপর ঢাকার আরেকটি হাসপাতাল ঘুরে গত ১৪ ডিসেম্বর আসেন পঙ্গু হাসপাতালে।

'আমি কবে সুস্থ হতে পারবো সেটা অনিশ্চিত। আমার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় করতাম, সেই টাকায় পরিবার চলতো। এখন আমার সঙ্গে পরিবারও ভুগছে,' বলেন ইমরান।

'উন্নত চিকিৎসা আমার অধিকার, এটা চাইতে হবে কেন? আমি কৃষক পরিবারের ছেলে। আমার পড়ালেখা অনিশ্চিত, কবে সুস্থ হতে পারবো সেটাও অনিশ্চিত। পরিবারের জন্য আমি বোঝা হয়ে গেছি। আমার মতো আরও যারা আছেন, তাদের সবার চিকিৎসা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। যাকে বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন, তাকে পাঠাতে হবে। যদি সবাইকে পাঠানো সম্ভব না হয়, বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে,' বলেন সিরাগঞ্জের এনায়েতপুর উপজেলার উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী হেলাল হাসান।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে তিনি আহত হয়েছিলেন। তার পেটে গুলি লেগে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়।

হেলাল ডেইলি স্টারকে জানান, রাতে তারা সড়কেই অবস্থান করবেন এবং রোববার বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন। ঢাকার এবং ঢাকার পাশের সব হাসপাতাল থেকে আহতরা আসবেন।

তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে শের-ই-বাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম আজম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় অর্ধশতাধিক আহত ও তাদের স্বজনরা সড়ক অবরোধ করেছেন। তাদের নিরাপত্তায় ঘটনাস্থলে পুলিশ আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Hasnat warns media against airing Hasina’s speech

Vows to free Bangladesh from the 'pilgrimage site of fascism'

2h ago