বাংলাদেশের আলোচনার ‘টোন’ আলাদা হবে: বিএসএফের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ফাইল ছবি: বাসস থেকে নেওয়া

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সঙ্গে মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলেন বাংলাদেশের আলোচনার 'টোন' আলাদা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তিনি বলেন, 'আমাদের আলোচনার টোন ভিন্ন হবে।'

আজ বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নয়াদিল্লিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের মধ্যে এ সম্মেলন হওয়ার কথা।

আসন্ন এই সম্মেলনের জন্য বাংলাদেশের এজেন্ডা নির্ধারণের ওপর আজকের আলোচনায় আলোকপাত করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সীমান্ত হত্যা, অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, মানব পাচার এবং পানিবণ্টনের মতো বিষয়গুলো সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে উত্থাপন করা হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, সীমান্তে বিএসএফ সদস্য ও ভারতীয় নাগরিকদের দ্বারা নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের হত্যা বন্ধ করতে হবে।

'এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা ভারতকে জোরালোভাবে বলব,' বলেন তিনি।

তিনি সীমান্তের কাছে কাজ করার সময় বাংলাদেশি কৃষকদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন এবং এই ধরনের ঘটনা বন্ধের আহ্বান জানান।

সীমান্তে চোরাচালান নিয়ে তিনি বলেন, 'ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের অজুহাতে ভারতে তৈরি ফেনসিডিলের মতো অবৈধ মাদক বিপুল পরিমাণে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।'

'সীমান্তে ১৫০ গজের মধ্যে কিছু কাজ করতে হলে দুই পক্ষের অনুমতি নিতে হয়। এগুলো একপক্ষে করার নিয়ম নেই। যদিও তারা এভাবেই করতে চায়। আগামীতে কিছু করতে হলে যেন তারা সম্মতি নেয় এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে,' বলেন জাহাঙ্গীর আলম।

এছাড়াও বাংলাদেশ নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনার জন্য চাপ দেবে, যার মধ্যে বিদ্যমান পানি চুক্তি বাস্তবায়ন ও সংরক্ষণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

ভারতীয় শিল্প বর্জ্য আগরতলা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একটি চুক্তি রয়েছে। চুক্তিতে ইটিপি/এসটিপির কথা উল্লেখ ছিল। তবে, চুক্তিতে ইটিপি ও এসটিপি লিখিত আকারে থাকা উচিত। আমরা তাদের সঙ্গে এটি নিয়ে আলোচনা করব।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান নদীগুলোর পানির সুষম বণ্টনের জন্য আলোচনা করা হবে।

'ছোট নদী নিয়ে কথা বলা যাক। কারণ বড় নদীগুলোর জন্য একটি পৃথক নদী কমিশন রয়েছে,' বলেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম জানান, ফেনীর মুহুরী চরে একটি সমস্যা আছে।

'সীমান্ত পিলার স্থাপন করে সীমানা নির্ধারণে সমস্যা রয়েছে। সে বিষয়েও আলোচনা হবে,' বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রচারিত ভুল তথ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'দুই দেশের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা রোধে এ ধরনের মিথ্যা তথ্য কীভাবে দমন করা যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করব।'

সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও বিরোধগুলো সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে বলে জানান তিনি।

১৯৭৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত সীমানা নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক চারটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, '২০১০ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তির মধ্যে বড় সমস্যা আছে। চুক্তিটি কিছুটা অসম। এই বিষয়ে আলোচনা হবে, চুক্তিটি এভাবে করা উচিত ছিল না। এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আগেই জানানো হয়েছে।'

'আমরা বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য ন্যায্যতা বাস্তবায়নের ওপর জোর দেব,' বলেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পুনর্ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশ আলোচনায় বাস্তববাদী ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি নেবে, জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রাখবে।

তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের সীমান্ত রক্ষা ও আমাদের জনগণের অধিকার সুরক্ষিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের সার্বভৌমত্ব এবং কল্যাণের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান রেখে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

উল্লেখ্য, আগামী ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে ৫৫তম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় স্বরাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খুদা বক্স চৌধুরী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English
Reforms vs election

Reforms vs election: A distracting debate

Those who place the election above reforms undervalue the vital need for the latter.

15h ago