৫ সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি বিষয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
সময় টেলিভিশনের পাঁচজন গণমাধ্যমকর্মীর আকস্মিক চাকরি হারানোর ঘটনায় ওঠা অভিযোগ অসত্য ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি মনে করেন, এটি তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু না।
আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজের অবস্থান তুলে ধরেন।
গতকাল বিবিসির একটি প্রতিবেদনে এএফপির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, 'প্রায় ১৫ জনের একটি দলসহ হাসনাত আব্দুল্লাহ সিটি গ্রুপের হেড অফিসে গিয়ে কয়েকজনকে চাকরি থেকে বাদ দেয়ার জন্য চাপ দেয়ার কথা বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান।'
চাকরিচ্যুত পাঁচজন সাংবাদিকের অভিযোগ, 'গত ১৮ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ কয়েকজনকে নিয়ে সময় টিভির বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেন এবং টিভি স্টেশনের ১০ জনের নামের একটি তালিকা দিয়ে তাদের চাকরিচ্যুত করতে চাপ দেন।'
হাসনাত বলেন, 'পুরো দেশবাসী জানে ফ্যাসিবাদী হাসিনার নিকৃষ্ট মুখপাত্র হিসেবে বছরের পর বছর ধরে ফ্যাসিবাদের প্রপাগান্ডা সেল হিসেবে কাজ করেছে সময় টেলিভিশন। বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলীয় নেতাদের নিয়ে নিয়মিত ভুয়া ও কুরুচিকর প্রতিবেদন করাই ছিল সময় টিভির কাজ। আওয়ামী লীগের প্রপাগান্ডা সেল সিআরআইয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে জনবিরোধী অবস্থান নিয়ে বছরের পর বছর অনৈতিক ও অসৎ সাংবাদিকতা করেছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।'
'ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম অনুচর কামরুল ইসলাম ছিল যার নেপথ্য নেতৃত্বে। এখনো আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলামের ভাই মোরশেদুল ইসলাম রয়ে গেছে সময় টিভির সঙ্গে। যিনি নেপথ্যে থেকে পতিত আওয়ামী লীগের পক্ষে ছাত্র-জনতার চরিত্রহনন করছেন,' অভিযোগ তোলেন হাসনাত।
তিনি আরও বলেন, 'এমনকি ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানে সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে চট্টগ্রামের আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডের পরও ভুয়া তথ্য দিয়েছিল এই সংবাদ মাধ্যমটি। এসব কার্যক্রম নিয়ে আমরা আগে থেকেই সচেতন ও বিশুদ্ধ ছিলাম।'
'সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন সময় এবং এখন টিভির কয়েকজন সাংবাদিক আমাদের কিছুটা প্ররোচিত করে গত ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে সময় টিভির এমডি হাসানের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এটা যে একটা চক্রান্ত ছিল, তা আমরা তখন বুঝতে পারি নি। আমরা সরল মনে কথা বলতে গিয়েছিলাম,' যোগ করেন তিনি।
সময় টিভির এমডির সঙ্গে আধাঘণ্টা আলাপ হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, 'বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমি ১৮ ডিসেম্বর গিয়েছিলাম। এটি থেকে পরিষ্কার যে, এই ঘটনার সত্যতা বিবিসি বাংলা ভালোভাবে যাচাই করেনি।'
সময় টেলিভিশনের একজন সংবাদকর্মীর মাধ্যমে সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাসানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল, জানান হাসনাত।
'আমাদের সংক্ষিপ্ত বৈঠকে ৫ আগস্টের পরবর্তী পরিস্থিতিতে সময় টেলিভিশনে চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছিল। সেখানে আমি এবং উপস্থিত ব্যক্তিরা সঠিক সংবাদ প্রচার করে ফ্যাক্টভিত্তিক সাংবাদিকতার আহ্বান জানিয়েছিলাম। প্রোপাগান্ডামূলক সাংবাদিকতা থেকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ করেছিলাম,' বলেন হাসনাত।
তিনি আরও বলেন, 'আমি দায়িত্ব নিয়ে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, সেখানে আমি কোনো সাংবাদিকের তালিকা দিইনি। এবং চাকরি থেকে বাদ দেওয়া সাংবাদিকদের ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। বার্তা সংস্থা এএফপি এবং বিবিসি বাংলার কাছে আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, আমি সিটি গ্রুপ এবং সময় টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে কোনো সংবাদিকের তালিকা দিয়েছি এবং কাউকে বরখাস্ত করতে চাপ দিয়েছি সেটির পক্ষে যদি তাদের কাছে কোনো প্রমাণ থেকে থাকে সেটি যেন তারা হাজির করেন; না পারলে তা যেন স্বীকার করেন।'
'আমি মনে করি "হাসান অভিযোগ করেছেন"—এটাই এ ধরনের একটি প্রতিবেদনের মূল ভিত্তি হতে পারে না। কারণ তার সঙ্গে যখন আমার টেলিফোনে কথা হয়, তিনি বলছেন, আমি কোনো ছাঁটাইয়ের তালিকা তাকে সরবরাহ করিনি বা এমন কোনো কথা বলিনি। এই বক্তব্যের স্বপক্ষে আমি প্রমাণ দিতে পারবো,' যোগ করেন তিনি।
হাসনাতের অভিযোগ, 'এটি স্পষ্ট যে, সিটি গ্রুপের মালিক হাসান আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অসত্য এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন, যা তার মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে।'
'আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এই পুরো ষড়যন্ত্রে আমাকে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। চক্রান্তে পড়ে সময় টিভির মালিকের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়াটা আমার ভুল হয়েছে, যা স্বীকার করতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। আমি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। সঠিক তথ্যেরভিত্তিতে অবশ্যই যে কোনো গণমাধ্যম আমার বা আমাদের বিরুদ্ধে লিখবে, সেটা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে আমরা আন্দোলন করেছি, রক্ত দিয়েছি। দানব হাসিনার পতন ঘটিয়েছি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য, পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার উৎকর্ষ সাধনের জন্যে, সাংবাদিকের চাকুরিচ্যুত করার জন্যে নয়,' উল্লেখ করেন তিনি।
বিবৃতিতে হাসনাত তিন দফা দাবি জানান। সেগুলো হলো—সময় টেলিভিশনের চাকুরিচ্যুত পাঁচ সাংবাদিককে পুনর্বহাল; যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন; তদন্ত সাপেক্ষে সিটি গ্রুপের মালিক হাসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।
হাসান এই ধরনের বক্তব্য না দিয়ে থাকলে গণমাধ্যমে প্রতিবাদ পাঠানোর আহ্বান জানান হাসনাত।
Comments