জাতি নতুন করে বিজয় দিবস উদযাপন করছে আজ

savar_smiritishoudh
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ছবি: বাসস থেকে নেওয়া

নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে জাতি আজ নতুন করে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করবে।

১৫ বছরের বেশি সময় ধরে চলা স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা ঢাকার রাজপথে জন বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে উৎখাত হন। ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর জন্য তার সরকার ক্ষুব্ধ জনতার রাজনৈতিক রোষানলের মুখে পড়লে তিনি ভারতে পালিয়ে যান।

এ বছর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাংলাদেশের নবযাত্রায় জাতি নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা নিয়ে দিনটি পালন করবে। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পর অধিকাংশ দেশবাসী এ সময়টাকে 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা' বলেও অভিহিত করছে।

স্বৈরশাসককে ক্ষমতাচ্যুত করতে গিয়ে শত শত ছাত্র-জনতা শাহাদাত বরণ করেছে, সাত শতাধিক মানুষ চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে, অনেকে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খুইয়েছে, কমপক্ষে ২৪ হাজার মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, বিপুলসংখ্যক মানুষকে জোরপূর্বক গুমের শিকার হতে হয়েছে, অনেক আহত মানুষ এখনও হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এবং অনেকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কালাতিপাত করছে।

মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হঠাতে এবং এরপর এ বছর শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের কবল থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে যেসব শহিদ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, জাতি তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নতুন করে শপথ গ্রহণ করবে।

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার মুহূর্তকে স্মরণ করে বিজয় দিবস উদযাপন শুরু হবে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে স্মৃতিসৌধ পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সারা দেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।

আলোচনা সভা এবং মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচি পালন করা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে বিএনপিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতারা পৃথক বাণী দিয়েছেন। তারা মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন এবং নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা করবেন।

বিজয় দিবসের প্রাক্কালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান এবং মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। 

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, 'রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তাবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি উন্নত, সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ। মহান বিজয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা।'

রাষ্ট্রপতি বলেন, 'এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দেখেছে, তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে বলে আমি মনে করি। বীরের দেশ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ।'

তিনি বলেন, 'বিজয়ের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি সকল জাতীয় নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যারা আমাদের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। আমি আরও স্মরণ করি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদেরকে। জাতি তাদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।'

প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেন, 'আজকের এই দিনে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহিদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি এবং তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাই। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করছে।'

বিজয় দিবসের প্রাক্কালে দেওয়া এই বাণীতে তিনি বলেন, দেশকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'বিজয় দিবস কেবল আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার।'

বিজয় দিবসকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গৌরবময় ও স্মরণীয় দিন হিসেবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতার স্বাদ এবং জাতি হিসেবে নিজস্ব পরিচিতি।

প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, 'লাখ লাখ শহিদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।'

প্রধান উপদেষ্টা 'বিজয় দিবস ২০২৪' এর সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।

মহান বিজয় দিবস-২০২৪ উপলক্ষে ৩২ জন জুনিয়র কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারকে সম্মানসূচক কমিশন দিয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাস্টার চিফ পেটি অফিসার (এমসিপিও) পদমর্যাদার জুনিয়র কমিশনড অফিসারদের অনারারি সাব-লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Those involved in Ijtema ground deaths won't be spared: home adviser

The home adviser met with both factions of Tabligh Jamaat today at the Secretariat

1h ago