শেষ হলো হরেন্দ্রনাথের ৪০ বছরের আইনি লড়াই

হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র
হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত

চার দশকের দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে অবশেষে ন্যায়বিচার পেলেন ৭৯ বছর বয়সী হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র। সোনালী ব্যাংক থেকে তহবিল তছরুপের মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে হরেন্দ্রনাথ কারাভোগ, আর্থিক ক্ষতিসহ বহু কষ্ট সহ্য করেছেন এই দীর্ঘ সময়ে।

১৯৮৫ সালে ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সোনালী ব্যাংক হরেন্দ্রনাথসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে এবং বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে। এতে হরেন্দ্রনাথের চাকরি চলে যায় এবং তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়।

গত চার দশক ধরে হরেন্দ্রনাথ ন্যায়বিচারের আশায় ক্লান্তিহীন লড়ে গেছেন। গতকাল, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে তাকে সব অভিযোগ থেকে খালাস এবং আইনগত খরচবাবদ ক্ষতিপূরণ হিসাবে সোনালী ব্যাংককে ২০ লাখ টাকা দিতে আদেশ দিয়েছেন।

আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এ অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।

হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের করা লিভ টু আপিলও খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, বিএ স্নাতক হরেন্দ্রনাথ ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংকে ক্যাশিয়ার কাম ক্লার্ক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিন বছর পর সিনিয়র ক্যাশিয়ার-কাম-ক্লার্ক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে যাত্রাবাড়ী শাখায় বদলি হন।

এসময় যাত্রাবাড়ী শাখা থেকে মতিঝিল শাখায় ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা রেমিট্যান্স স্থানান্তর করা হয়। গ্রহীতা শাখা অফিসার সিল এবং স্বাক্ষরসহ সম্পূর্ণ টাকাণ লিখিতভাবে গ্রহণ করেছেন। কিছু দিন পর ১৯৮৫ সালে একটি অভ্যন্তরীণ ব্যাংক তদন্তে দেখা যায় ওই তহবিল নেই। ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে সোনালী ব্যাংক বিভাগীয় কার্যক্রম শুরু করে এবং হরেন্দ্রনাথসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে তহবিল আত্মসাতের অভিযোগে তিনটি মামলা করে।

এই ঘটনা হরেন্দ্রনাথের জীবনকে ওলট-পালট করে দেয়।

'আইনি লড়াইয়ের জন্য আমি আমার বাড়ি ও জমি বিক্রি করতে বাধ্য হই। সংসারের খরচ চালাতে আমি প্রায় ১৫ বছর ধরে একটি বাসস্ট্যান্ডে টিকিট বিক্রেতার কাজ করেছি।'

কান্নাজড়িত কণ্ঠে হরেন্দ্রনাথ আক্ষেপ করে বলেন, 'এখন আমার বয়স ৭৯ বছর। আমি এখন নিঃস্ব।'

সোনালী ব্যাংকের সব বকেয়া বেতন ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া জন্য হরেন্দ্রনাথ হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন, যা বিচারাধীন।

হরেন্দ্রনাথের পক্ষে একাধিক আদালতের রায়ের পরও ব্যাংকের মামলা চালিয়ে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন হরেন্দ্রনাথের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। তিনি বলেন, 'ন্যায়বিচারের জন্য আমার মক্কেল জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় লড়াই করে গেছেন।'

এ বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেও সোনালী ব্যাংকের আইনজীবী আবদুস সোবহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

1h ago