শস্যদেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লালমাটিয়ায় গারোদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘ওয়ানগালা’

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

গারো জাতিগোষ্ঠীর বিশ্বাস, শস্যদেবতা 'মিশি সালজং'র ওপর ভরসা রাখলে ফসলের ভালো ফলন হয়। এই দেবতাকে নতুন ফসলের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতি চেয়ে তারা পালন করে থাকে ওয়ানগালা (নবান্ন) উৎসব।

আজ শুক্রবার রাজধানীর লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হলো গারো সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব।

উৎসবের শুরুর অংশে ছিল জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলন পর্ব। এরপরেই সর্বজনীন প্রার্থনায় অংশ নেন উপস্থিত সবাই।

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

প্রার্থনা পর্বের পরে ছিল বর্নাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন।

ঢাকায় ওয়ানগালা উৎসব আয়োজকদের একজন অন্ত ঘাগ্রা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ফসল উৎসব ওয়ানগালা মূলত ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উৎসব, যা এখন ঢাকাবাসী গারোরা প্রতীকী রূপে পালন করে আসছেন।'

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

অন্ত ঘাগ্রার অভিমত, 'ঢাকা ওয়ানগালা শুধু একটি উৎসব নয়, এটি গারো সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের প্রতীক। পূর্বপুরুষদের সংগ্রাম এবং ঐতিহ্যের ধারাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এই উৎসব আমাদের শেকড়ের প্রতি ভালোবাসা এবং একতার প্রতীক । তাই গারোদের অনেকে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করলেও আদি এই উৎসবের স্মৃতি ও ঐতিহ্য আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন।'

অতীতে গারোদের জীবন ও জীবিকা ছিল মূলত কৃষিনির্ভর, যা ছিল জুমচাষভিত্তিক। তারা তাদের কৃষিবর্ষের শেষ দিকে ক্ষেতের ফসল ঘরে তোলার সময় নকমার (গ্রাম প্রধান) নেতৃত্বে গ্রামের সবাইকে নিয়ে ওয়ানগালা উৎসব উদযাপন করতেন।

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

আদিবাসী গারোরা বিশ্বাস করেন, শস্য দেবতা 'মিশি সালজং' পৃথিবীতে প্রথম ফসল দিয়েছিলেন এবং তিনি সারাবছর পরিমাণ মতো আলো-বাতাস, রোদ-বৃষ্টি দিয়ে ভাল শস্য ফলাতে সহায়তা করেন। তাই নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় মিশি সালজংকে ধন্যবাদ জানাতে উৎসবের আয়োজন করতেন তারা। শস্যদেবতাকে উৎসর্গ না করে তারা কোনো খাদ্য ভোগও করতেন না।

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

আজ এই উৎসবের অংশ হিসেবে লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুলের মাঠে তৈরি করা হয় গারোদের বিভিন্ন লোকজ পণ্যের অস্থায়ী স্টল। এসব স্টলে স্থান পায় গারো সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পোশাক, খাবার, শাক-সবজিসহ নানাকিছু। উৎসবে আসা লোকজন স্টল ঘুরে ঘুরে রকমারি খাবারের স্বাদ নেন। কেউ কেউ বাসার জন্য নিয়ে যান জুমের আলু, কুমড়া, শামুক, কাঁকড়া।

দুপুরের পর ছিল তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, নবনিযুক্ত নক্‌মা ও নক্‌মামিচিক অভিষেক অনুষ্ঠান এবং র‌্যাফেল ড্র।

Comments

The Daily Star  | English

IMF reaches agreement on $1.3 billion credit facility for Bangladesh

The global lender reaches agreement on third, fourth reviews of credit facility for the country

54m ago