ত্রিপুরায় বাংলাদেশি যাত্রীদের হেনস্তার অভিযোগ

ত্রিপুরায় ভ্রমণকালে হয়রানি ও হেনস্তার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন ভারত থেকে ফেরা বাংলাদেশিরা।

আজ মঙ্গলবার দিনভর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট হয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসা অন্তত অর্ধশতাধিক যাত্রী জানান, আগরতলায় তাদের হয়রানি ও নাজেহাল করা হয়েছে।

আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের পর আখাউড়া সীমান্ত অভিমুখে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সমর্থকদের লং মার্চ কর্মসূচিকে ঘিরে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আখাউড়া সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আখাউড়া স্থলবন্দরেও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ত্রিপুরা থেকে ফেরা যাত্রীদের ভাষ্য, গতকাল থেকে আগরতলা শহরে কোনো বাংলাদেশির হোটেল বুকিং নেওয়া হচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েন দেশটিতে ইতোমধ্যে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। বাধ্য হয়ে অনেকে কাজ শেষ না করেই ফিরে এসেছেন, আবার জরুরি কাজে যারা গিয়েছেন, তারা শহরের বাইরের হোটেলে থাকছেন।

শপিংমলগুলোতে কেনাকাটা করতে গেলে বাংলাদেশি পরিচয় বুঝতে পারলে দোকানিরা কিছু বিক্রি করছেন না। এমনকি, আগরতলা ইমিগ্রেশনেও বাংলাদেশিদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, জানান তারা।

এ ছাড়া, বিক্ষোভের কারণে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ভারতে রপ্তানিকৃত পণ্য আগরতলা স্থলবন্দর থেকে খালাস করতে পারেননি আমদানিকারকরা।

করিমগঞ্জ টাউন ক্লাবে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মেলায় অংশ নিতে আগরতলা গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বাসিন্দা ও মৌসুমি জামদানী ফ্যাশন অ্যান্ড ওয়েভিং ফ্যাক্টরির কর্ণধার মো. মুজিবুর রহমান।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল রাত ৮টার দিকে শতাধিক মানুষ মেলায় ঢুকে আমাদের স্টলের শাড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলে। তারা আমাদের স্টলের সাইনবোর্ড ভেঙে দেয় এবং ক্যাশের টাকা লুটে নিয়ে যায়।'

তার অভিযোগ, 'তারা "বাংলাদেশি কই" বলে আমাদের খুঁজতে থাকে। আমরা ভয়ে মেলার পেছনে লুকিয়ে থাকি। কোনো রকমে হোটেলে রাতটা পার করে দেশে ফিরে আসি।'

'দেশে ফেরার পথে সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় কিছু লোক "জলদি হাঁট" বলে আমাদের ধমকাতে থাকেন,' যোগ করেন তিনি।

কুমিল্লার লাকসাম এলাকার বাসিন্দা ফরিদ আহমেদ বলেন, 'কলকাতা বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে শখ করে আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে আগরতলা গিয়েছিলাম সোমবার। সেখান থেকে ফ্লাইটে কলকাতা যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আগরতলা শহরের কোনো হোটেল আমাদের বুকিং দিচ্ছিল না। বাংলাদেশি জানলেই বলে, রুম খালি নেই। কয়েক ঘণ্টা পর শহরের বাইরে একটি হোটেলে উঠি।'

তিনি বলেন, 'সেখানে ঘণ্টাখানেক থাকার পরই স্থানীয়রা হোটেলের নিচে হৈ-হুল্লোড় শুরু করে। তারা বলতে থাকে, হোটেলে কোনো বাংলাদেশি কিংবা মুসলমান থাকতে পারবে না। কয়েক ঘণ্টা পরে হোটেল কর্তৃপক্ষ আমাদের বের করে দেয়।'

'আজকে দেশে ফেরার পথে সীমান্তের স্থানীয়রা আমাদের জিজ্ঞেস করে, আমরা ড. ইউনূসের লোক কি না,' যোগ করেন তিনি।

আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (পরিদর্শক) মো. খাইরুল আলম বলেন, 'ভারত থেকে যারাই ফিরছেন তারা নানা অভিযোগ জানাচ্ছেন। হোটেল রুম ভাড়া না দেওয়া এবং ইমিগ্রেশনে হয়রানির অভিযোগও করছেন তারা। এসব কারণে আজ মঙ্গলবার যাত্রী যাতায়াত একেবারে সীমিত ছিল। বিষয়গুলো আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।'

বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ. এম. জাবের বিন জব্বার বলেন, 'বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সীমান্তের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে স্থলবন্দরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

59m ago