যুক্তরাজ্য চায় ড. ইউনূস জাতীয় ঐক্যের পরিকল্পনা তুলে ধরবেন: ক্যাথরিন ওয়েস্ট

ছবি: ইউএনবি

যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার জাতীয় ঐক্য ত্বরান্বিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই যুক্তরাজ্য আশা করছে, কীভাবে সেসব বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে তার পরিকল্পনা তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর ক্যাথরিন বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের জনগণকে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যেতে সহায়তা করার চেষ্টা করবে।

পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সব রাজনৈতিক দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে কি না- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'অবশ্যই এবং আমরা আশা করছি, কীভাবে এসব ঘটবে সে বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন অধ্যাপক ইউনূস।'

ওয়েস্ট বলেন, তারা জানেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এসব উদ্দেশ্য সাধন করতে যুক্তরাজ্য সরকারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।'

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, তারা একক কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেননি। তবে বাংলাদেশ বর্তমানে রূপান্তরের পর্যায়ে থাকায় তারা সরকারকে সমর্থন করতে চান।

তিনি বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেসব কাজ করছে আমরা তাদের সব কাজে সহযোগিতা করতে চাই।'

ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, 'আমরা জানি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক খুবই শক্তিশালী।'

বাংলাদেশের জনগণের জন্য উন্নত গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃঢ় সংকল্পকে স্বাগত জানান তিনি।

ওয়েস্ট বলেন, 'বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমাদের খুব শক্তিশালী ও অবিচল বন্ধুত্ব রয়েছে। আমরা শক্তিশালী অংশীদারত্ব গঠন করতে চাই এবং সেই গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিপ্রস্তরটি শক্তিশালী সম্পর্কের ওপর নির্মাণ করতে চাই। পাশাপাশি একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।'

অর্থনীতি ও বাণিজ্য থেকে শুরু করে নিরাপত্তা, অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি জানান, তারা একসঙ্গে অনেক কিছু করছেন এবং তাদের অবশ্যই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, কয়েক মাসের অশান্ত অবস্থার পর বাংলাদেশের জনগণের 'শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ ও জবাবদিহির' জন্য একটি পথ পাওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, 'অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে এবং শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে যুক্তরাজ্য কীভাবে সর্বোত্তম সহায়তা করতে পারে তা, নিয়ে আলোচনা করতে আমি এখানে এসেছি।'

রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা শরণার্থীদের জন্য উপযুক্ত আশ্রয় নির্মাণ এবং শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য, চিকিৎসা সরবরাহ ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে তারা আরও ১০ মিলিয়ন পাউন্ড ঘোষণা করেছেন।

গত আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর এই প্রথম যুক্তরাজ্যের কোনো মন্ত্রীর সফর বাংলাদেশ সফর।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার, নিরাপত্তা, বাণিজ্য সহযোগিতা এবং যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ অভিবাসনে চলমান সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।

ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বর্তমানে অনন্য ও ঐতিহাসিক অংশীদারত্ব বিরাজ করছে। এটি দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক এবং অভিন্ন কমনওয়েলথ মূল্যবোধের কারণে দৃঢ় হয়েছে।

এই সফরে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতা এবং সুশীল সমাজের সঙ্গেও বৈঠক করবেন ওয়েস্ট।

ক্যাথরিন ওয়েস্ট বলেন, 'বাংলাদেশের জনগণের জন্য আরও সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজকে সমর্থন করে যুক্তরাজ্য।'

বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, 'ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্টকে বাংলাদেশে স্বাগত জানাতে পেরে আমি আনন্দিত।'

হাইকমিশনার বলেন, এই সফর বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা অংশীদারত্বকে আরও ব্যাপক ও গভীর করবে।'

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ বর্তমানে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং দীর্ঘদিনের বন্ধু হিসেবে যুক্তরাজ্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারে সহায়তা করবে। এটি বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সহায়তা করবে।'

যুক্তরাজ্যের সহায়তার মধ্যে বিক্ষোভে গুরুতর আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত মেডিকেল টিম মোতায়েনের কথাও রয়েছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বাংলাদেশের স্থানীয়রা যুক্তরাজ্যের নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সেবা পাবে।

এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিরাও যুক্তরাজ্যের অর্থায়নে সহায়তাও পাবেন।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারে যুক্তরাজ্যের সমর্থন নিয়ে ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন ব্রিটিশ মন্ত্রী।

এছাড়া দৃঢ় সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে এবং পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

21m ago