মওলানা ভাসানীর স্বপ্ন, কাজ, স্মৃতিচিহ্নগুলো অবহেলিত

ভাসানী প্রতিষ্ঠিত ২৫ শিক্ষা ও অন্যান্য দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ১২টি ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সমাধিস্থল। ছবি: স্টার

উপমহাদেশের কিংবদন্তি রাজনৈতিক নেতা ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। টাঙ্গাইলের সন্তোষে তার স্বপ্ন, কাজ ও স্মৃতিচিহ্ন বিগত সরকারগুলোর 'হীনমন্যতার' কারণে রয়ে গেছে অবহেলিত।

১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ভাসানী। আজ ১৭ নভেম্বর তার ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মওলানা ভাসানীর প্রতিষ্ঠিত অনেক প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং অনেকগুলো যথাযথ পরিচর্যা ও সংরক্ষণের অভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে।

যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ভাসানী স্মৃতিস্মারকগুলো। ছবি: স্টার

রাস্তা প্রশস্ত করার অজুহাতে মওলানা ভাসানীর লাগানো পুরনো সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আবার পরিকল্পনা ছাড়াই বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য খেলার মাঠ ধ্বংস করা হয়েছে।

দরবার হলসহ ভাসানীর স্মৃতিচিহ্নগুলোও জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ এবং যত্ন প্রয়োজন। এই দরবার হল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক, যেখানে সব বিশ্বাস ও ধর্মের সর্বস্তরের মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের মতামত প্রকাশ করতে সমবেত হতেন।

১৯৭০ সালের এপ্রিল থেকে আগস্টের দরবার হলটি নির্মাণ করা হয়। কাঠের স্তম্ভ, চার স্তর বিশিষ্ট টিনের ছাদ এবং তিন ফুট ইটের দেয়াল দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। এখানে বসতে পারেন ৫০০ মানুষ। একটি দুই ফুট উঁচু মঞ্চ রয়েছে সেখানে। এতে দাঁড়িয়ে ভাসানী বক্তৃতা দিতেন।

স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ডাকে প্রথম সর্বদলীয় সম্মেলন হয় ১৯৭১ সালের ৯ জানুয়ারি, দরবার হলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঐতিহাসিক এই হলটি পুড়িয়ে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টাও করে।

মৃত্যুর পর মওলানা ভাসানীকে এই দরবার হলের পাশে শায়িত করা হয়।

সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দরবার হলের ভেতরে কাঠের স্তম্ভগুলো ক্ষয় হয়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে কাঠামোটিও। ১৯৮৬ সালে হলের পাশে স্থাপিত ভাসানী জাদুঘরে সংরক্ষিত ভাসানী স্মারকগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির অবস্থাও শোচনীয়।

দরবার হল। ছবি: স্টার

মওলানা ভাসানী ঐতিহাসিক প্রয়োজনে মামলা-মোকদ্দমার মাধ্যমে কাগমারী পরগণার জমি উদ্ধার করে পাকিস্তান আমল থেকে টাঙ্গাইলে জনহিতকর কার্যক্রম শুরু করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করেন এবং দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলে দেন।

ভাসানীর মৃত্যুর পর ১৯৮৩ সালে সরকার একটি আইন প্রণয়ন করে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে এবং তার সম্পত্তি দেখাশোনা ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য মেয়াদ নির্ধারণ করে।

দীর্ঘ ব্যবধানের পর ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সরকার সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। ২০০৫ সালে ট্রাস্টি বোর্ড এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি সাধারণ সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল।

ভাসানীর একাধিক অনুসারীর অভিযোগ, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ট্রাস্টি বোর্ড সমঝোতা স্মারকের শর্তাবলী প্রতি অবহেলা অব্যাহত রেখেছে এবং মওলানা ভাসানী যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং নিজের জীবদ্দশায় শুরু করেছিলেন, তা বন্ধ হয়ে গেছে।

পাশাপাশি আর্থিক বরাদ্দ ও জনবল সংকটের কারণে অন্যান্য সহযোগী সংস্থার কার্যক্রমও কার্যত বন্ধ।

মওলানা ভাসানীর মৃত্যুর পর সমঝোতা স্মারক সই পর্যন্ত বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ট্রাস্টি বোর্ড যথাসম্ভব তাদের দেখভাল করেছে। কিন্তু সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পর মওলানা ভাসানীর প্রতিষ্ঠিত ২৫টি শিক্ষা ও অন্যান্য দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টি ইতোমধ্যেই উধাও হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন মওলানা ভাসানীর নাতি ও ভাসানী পরিষদের সভাপতি আজাদ খান ভাসানী।

এটাকে তিনি ইতিহাস থেকে মওলানা ভাসানীর স্বপ্ন, কর্ম ও স্মৃতি মুছে ফেলার অংশ বলে মনে করেন।

যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আনোয়ারুল আজিম আকন্দ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি সম্প্রতি যোগদান করেছেন, কিন্তু ইতোমধ্যে এই মহান নেতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'ক্যাম্পাসে মাওলানা ভাসানী যেসব প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা গড়ে তুলেছিলেন, সেগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

3h ago