পুনর্লিখন নয়, সংবিধান সংশোধন করা বাঞ্ছনীয়: সেমিনারে বক্তারা

ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্যে

রাষ্ট্র সংস্কারে ইতোমধ্যে একাধিক কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রশ্ন উঠেছে, সংবিধান নতুন করে লেখা হবে নাকি বিদ্যমান সংবিধান সংস্কার করা হবে?

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আজ শনিবার আয়োজিত 'গণতান্ত্রিক শাসনে উত্তরণের জন্য সাংবিধানিক সংস্কার' শীর্ষক এক পরামর্শমূলক সেমিনারে বক্তারা সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে মত দেন।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজ (বিআইপিএস) আয়োজিত এই সেমিনারের আয়োজন করে।

এতে বক্তব্য রাখেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আইনজীবী, সংবাদপত্রের সম্পাদক, আইনের শিক্ষকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের প্রস্তাব দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, 'এটিকে মেরামত করা যেত। কিন্তু এটিকে এমনভাবে বাধাগ্রস্ত (ব্যারিয়ার) করা হলো, নির্বাচন বলতে কিছুই থাকল না। ২০১৪ সালে একটি নির্বাচন হলো, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো না, ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়ে গেলেন। এরপর ২০১৮ সালে দেখা গেল রাতের বেলায় ভোট হয়ে গেল। আর ২০২৪ সালে দেখা গেল 'ডামি নির্বাচন'। ত্রয়োদশ সংশোধনী যদি থাকতো, অন্তত মন্দের ভালো একটি নির্বাচন হতে পারতো।'

সাবেক বিচারপতি সৈয়দ দস্তগীর হোসেন বলেন, 'ছাত্র-জনতা যদি না এগিয়ে আসতো, আমরা যে গর্তে পড়েছিলাম সেখানেই থাকতাম। স্বাধীনতা বলে আমাদের কিছুই ছিল না। আমাদের আইনি অধিকার, মৌলিক অধিকার, যত কথা আইন ও সংবিধানে ছিল কোনোটাই পালিত হচ্ছিল না।'

একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, 'এই রকম চার-পাঁচটা সংস্কার কমিটি করে কিছু হবে না। একসঙ্গে বসে সব ঠিকঠাক করতে হবে, না হলে হবে না।'

দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, 'বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার এই মুহূর্তে খুবই বড় দায়িত্ব এসেছে বলে আমি মনে করি, সেটা হলো সংবিধান নিয়ে আমাদের নিজেদের চিন্তা। সংবিধান আমাদের সবার জন্যে, যার ফলে আমরা সব নাগরিকরাই যেন সংবিধান নিয়ে চিন্তা করি। সংবিধান পড়ি, সংবিধানের ভেতরে আমাকে কী অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেটার সম্পর্কে সচেতন থাকি এবং সেই অধিকার যখন আমাকে না দেওয়া হয় বা আমার কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই সংবিধানের অধিকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে আমরা যেন মুখ খুলি, আন্দোলন করি।'

তিনি বলেন, 'এই মুহূর্তে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে আমরা একটা নতুন সুযোগ পাচ্ছি। আমাদের সামনে করণীয় কী? একটি বক্তব্য এসেছে, আমরা নতুনভাবে কি সংবিধান লিখব না আগেরটা সংশোধন করব। আমার মত হচ্ছে, আগেরটা সংশোধন করাটাই বাঞ্ছনীয়। কেননা আগেরটার মধ্যে আমাদের অনেক মূল্যবান বক্তব্য আছে। আমাদের ঐতিহ্যের বহু প্রতিচ্ছবি আছে। এটা যেমন সত্য, আবার এটাকে অ্যামেন্ড করে আরও গণতান্ত্রিক করা, আরও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের সরকার না আসে, যারা সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পারে। এখানে অ্যামেন্ডমেন্ট দরকার।'

সংবিধান সংশোধনে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন মাহফুজ আনাম বলেন, 'আমাদের অরিজিনাল কনস্টিটিউশনে ছিল সেপারেশন অব পাওয়ার। নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগ—পৃথিবীজুড়ে গণতান্ত্রিক সংবিধানে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়। যার ফলে ভারসাম্যের সংস্কৃতি আসে। বিচার বিভাগ সরকারের কাজের ওপর নজর রাখবে এবং আইন যেগুলো প্রণয়ন হবে সেগুলো সংবিধানের ভেতরে না বাইরে সেগুলো বিচার বিভাগ নির্ধারণ করবে। আইন বিভাগ আইন করবে এবং নির্বাহী বিভাগ দেশ পরিচালনা করবে।'

'আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হারিয়েছিলাম, আমরা সংসদের ভূমিকা হারিয়েছিলাম এবং সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে গিয়েছিল নির্বাহী বিভাগের কাছে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

7h ago