গুম কমিশনে ১৩ দিনে ৪০০ অভিযোগ, প্রমাণ মিলেছে ‘আয়নাঘরের’
গুম ব্যক্তিদের সন্ধানে তদন্ত কমিশন গঠনের প্রথম ১৩ দিনে ৪০০ অভিযোগ জমা পড়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ থেকে ডিজিএফআই পরিচালিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলের প্রমাণ মিলেছে যা 'আয়নাঘর' নামে পরিচিত। ঢাকায় ডিজিএফআই সদর দপ্তরে একটি দোতলা ভবনে ২২টি কক্ষে এই সেল পরিচালিত হতো।
আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'রাষ্ট্রীয় বাহিনী বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগগুলো আমরা তদন্ত করছি। অভিযুক্তদের তলব করব। তারা হাজির না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।'
তিনি আরও বলেন, 'অধিকাংশ গুমের অভিযোগ র্যাব, ডিজিএফআই, ডিবি এবং কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের বিরুদ্ধে।'
'গত ২৫ সেপ্টেম্বর আমরা ডিজিএফআই দপ্তরে আয়নাঘর পরিদর্শন করি এবং ১ অক্টোবর ডিবি ও সিটিটিসি কার্যালয় পরিদর্শন করেছি। তবে, সেসব জায়গায় কাউকে আটক অবস্থায় পাইনি। মনে হচ্ছে ৫ আগস্টের পর সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে,' বলেন তিনি।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমিশনে গুম সংক্রান্ত অভিযোগ জমা দেওয়ার সময়সীমা ছিল। তবে কমিশন প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, অভিযোগ জানানোর সময়সীমা ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, '৭৫ জন ব্যক্তিগতভাবে এসে অভিযোগ দিয়েছেন। অনেকে ডাকযোগে বা ইমেইলে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। প্রয়োজনে অভিযোগ গ্রহণের সময়সীমা আরও বাড়ানো হতে পারে।'
'তবে তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ হবে কিনা তা পরে মূল্যায়ন করা হবে,' যোগ করেন তিনি।
কমিশনের সদস্য নুর খান বলেন, 'আমরা ভুক্তভোগীদের তাদের পরিচয়ের ভিত্তিতে চিহ্নিত করব না। আমরা প্রতিটি অভিযোগ শুনতে চাই। আমরা বুঝতে চাই কী ঘটেছে এবং কীভাবে আইন লঙ্ঘন করে লোকজনকে আটক করা হয়েছে।'
কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস উল্লেখ করেন, ৪০০টি অভিযোগের মধ্যে অনেকগুলো প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এসেছে। অনেক ভুক্তভোগী তাদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে আগে কখনও কথা বলেননি এবং জিডিও করেননি।
কমিশনের আরেক সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, 'আয়নাঘর পরিদর্শনের সময় দেখেছি যে সেটি ভুক্তভোগীদের দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে মিলে গেছে। তবে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ ধ্বংস করা হয়েছে, বিশেষ করে দেয়ালে লেখাগুলো নেই।'
'আমরা তাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছি এবং একটি লিখিত নোটিশও পাঠিয়েছি, যাতে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আয়নাঘরের আর কোনো পরিবর্তন করা না হয়,' যোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গুমের ঘটনা তদন্তে সরকার ২৭ আগস্ট এ কমিশন গঠন করে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কমিশনস অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬ এর তিন নম্বর ধারার ক্ষমতাবলে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা (এসবি), গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থার সদস্যের মাধ্যমে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হলো।
এই কমিশন ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত ও কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিল তা নির্ধারণ করবে। এছাড়া, কমিশন আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গুমের ঘটনার বিবরণ জমা দেবে ও সুপারিশ করবে।
Comments