‘মায়ের ডাক’র সমন্বয়ক সানজিদার ভাই সাইফুলকে তুলে নেওয়ায় জড়িতদের বিচার দাবি
'মায়ের ডাক'র অন্যতম সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি তার ভাই সাইফুল ইসলাম শ্যামলকে তুলে নেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
একইসঙ্গে এই বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সানজিদা এই দাবি জানান।
যদি তিনদিনের মধ্যে এই বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে মায়ের ডাক রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেবে বলে জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আইএসপিআরের বিবৃতি সত্যকে আড়াল করতেই দেওয়া হয়েছে। এই বিবৃতি প্রত্যাহার করে সত্যকে সামনে এনে যারা দোষী তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং পেছনের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। এই ঘটনা বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী ও মায়ের ডাককে মুখোমুখি করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
'আমরা বিশ্বাস করি যে এটি এক ধরনের কৌশল, যা গুমের শিকার ভুক্তভোগীদের পরিবারকে চাপ দেওয়ার জন্য করা হচ্ছে, যারা গুমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা শুরু করেছে', বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
তুলি আরও বলেন, গুমকৃত ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সুরক্ষা চাই।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আইএসপিআরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি এই বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করবেন না।
এর আগে গতকাল সানজিদা ইসলাম তুলির বড় ভাই সাইফুল ইসলাম শ্যামলকে রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পরবর্তীতে কয়েক ঘণ্টা পর আবার তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরিবারের বরাত দিয়ে সানজিদা সাংবাদিকদের জানান, সেনা সদস্যরা তিনটি গাড়িতে করে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে তাদের বাসায় অভিযান চালান। সেই সময় তিনি মায়ের ডাক আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন।
তার অভিযোগ, সেনা সদস্যরা সাইফুলকে তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখা, মাদকের চোরাকারবার ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগের একটি দীর্ঘ তালিকা দেখান এবং তাকে সেখানে সই করতে বলেন।
তখন সাইফুল এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন জানিয়ে সেখানে সই করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর সেনা সদস্যরা আনুষ্ঠানিকতার জন্য আরেকটি কাগজে সই করতে বললে সাইফুল তা করেন।
অভিযানের সময় সেনা সদস্যরা তার বৃদ্ধা মাকে একটি ঘরে আটকে রাখেন। সেই সময় শিশু ও গৃহকর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
সানজিদা জানান, সেনা সদস্যরা সাইফুলের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এবং পরে তা ফেরত দেয়। একপর্যায়ে সাইফুলকে শেরেবাংলা নগর সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল ৫টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাইফুলকে তাদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়।
সানজিদা আরও বলেন, ঘটনাটি জানার পর তিনি ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স) এবং সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, যারা তাকে বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।
নিজবাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সানজিদা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান।
২০১৩ সালে গুমের শিকার বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন তুলির ধারণা, আওয়ামী লীগের অনুগত কর্মকর্তাদের একটি অংশ, যারা তার ভাইয়ের গুমের জন্য দায়ী, এই অভিযানের পেছনে তারাই ছিলেন।
'আমরা গুমের শিকার পরিবার এবং মায়ের ডাকের অনেক কর্মসূচি আমাদের বাড়িতে আয়োজন করেছি। মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে যদি আমাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়, তাহলে গুমের শিকার অন্য পরিবারগুলো ভীত হয়ে পড়বে', বলেন সানজিদা।
এই ঘটনার পর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং গুমের শিকার পরিবারের অনেক সদস্যই ওই বাড়িতে গেছেন।
বিষয়টি নিয়ে সোমবার আইএসপিআরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, সাইফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়েছিল। তিনি তুলির ভাই। কিন্তু অভিযানের সঙ্গে মায়ের ডাকের কোনো সম্পর্ক নেই।
ঘটনার পর সোমবার রাতে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর বলেছে, 'রাজধানীর শাহীনবাগ এলাকা থেকে আজ ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ৪৫ মিনিটে সাইফুল ইসলাম শ্যামল নামক এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে নিজবাসায় দিয়ে আসা হয়। পূর্ববর্তী তথ্য অনুযায়ী, সাইফুল ইসলাম শ্যামলের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে রমনা থানায় একটি মামলা হয়েছিল এবং যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কারাভোগ করেছিলেন। এ ছাড়াও আরেকটি মামলায় ২০১৬ সালে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বলে জানা যায়। সাইফুল ইসলাম শ্যামলের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার কারণেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।'
'উল্লেখ্য, সাইফুল ইসলাম শ্যামল "মায়ের ডাক" নামক সংগঠনের প্রধান সানজিদা ইসলাম তুলির বড় ভাই হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে তার পারিবারিক পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের অপপ্রচার অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ছাড়াও তার সঙ্গে সেনাবাহিনী কর্তৃক অসৌজন্যমূলক আচরণের দাবিও ভিত্তিহীন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সবাইকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে প্রকৃত তথ্য প্রচারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে সহযোগিতার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো', বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
Comments