শেয়ারবাজার কারসাজিতে নাফিজ সরাফাত

চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। ফাইল ছবি সংগৃহীত

অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অনেক কোম্পানির শেয়ারের মূল্য হেরফের করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রাথমিক তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সিআইডির উপ-মহাপরিদর্শক (অর্গানাইজড ক্রাইম) কুসুম দেওয়ান জানান,  ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং শিগগির মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে।

পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নাফিজ সরাফত, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ এবং রেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান তাহের ইমামের নেতৃত্বে একটি জোট সংগঠিত আর্থিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। যার মধ্যে রয়েছে অর্থপাচার, মানি লন্ডারিং, জালিয়াতি এবং ওভার ইনভয়েসিং।

২০০৮ সালে রেস ম্যানেজমেন্ট পিসিএলের লাইসেন্স নেন সরাফাত ও ইমাম। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিটি সে সময় বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে বেশ আলোড়ন তৈরি করেছিল।

২০১৩ সালের মধ্যে রেস ১০টি মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করত।

সিআইডির অনুসন্ধান অনুসারে, ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার চৌধুরী জাফরউল্লাহ সরাফাতের ছোট ভাই নাফিজ সরাফত, নাফিজের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা ও তাহের ইমাম তহবিল থেকে অর্থ বিনিয়োগ করেন এবং তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) শেয়ার কিনে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হন।

তবে ব্যাংকে এই বিনিয়োগ থেকে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো লাভবান হয়নি।

সিআইডির প্রতিবেদন অনুসারে, 'তহবিলের মোট আকার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। ফান্ডের টাকা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিটের রসিদ) খোলা হয়, কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মেয়াদোত্তীর্ণের আগেই তা ভেঙে ফেলা হয়।'

ফলে তহবিলের বিনিয়োগকারীরা কোটি টাকার মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

এর মধ্যে ৬৫০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি আমানত (এসটিডি) ও স্পেশাল নোটিশ ডিপোজিট (এসএনডি) অ্যাকাউন্টে মাত্র ৩-৪ শতাংশ সুদ জমা হয়।

আবারও ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সুদের অর্থের প্রায় ২-৩ শতাংশ আত্মসাৎ করা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পুঁজিবাজার থেকে প্রাপ্ত মুনাফার অন্তত ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণের নিয়ম থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই নিয়ম না মেনে রেস বেশিরভাগ তহবিল আত্মসাৎ করেছে।

কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (সিইউবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নাফিজ সরাফাত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-এর সঙ্গে যোগসাজশে বিনিয়োগকারীদের পুরো অর্থ ফেরত না দিয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছর বাড়িয়েছেন।

২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর রাজউক পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পের অধীনে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে ১৭১ দশমিক ১৬ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দেয়। এতে সরকারের ৭৭ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে সিআইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মিউচুয়াল ফান্ডের মালিকানার পাশাপাশি সারাফাত আরগাস ক্রেডিট রেটিং সার্ভিসেসেরও চেয়ারম্যান।

সিআইডির আর্থিক অপরাধ ইউনিটের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, 'আমরা ইতিমধ্যে নাফিজ সরাফাত এবং তার পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের আর্থিক অসঙ্গতি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছি।'

Comments

The Daily Star  | English
probe committee for past elections in Bangladesh

Govt launches probe into last 3 national polls

The government has formed a committee to investigate allegations of corruption, irregularities, and criminal activities in the three national elections held in 2014, 2018, and 2024.

7h ago