বীমা নেই মেট্রোরেলের, মেরামতের খরচ ট্যাক্সের টাকায়

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন। ছবি: স্টার

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন।

রাজধানীর গণপরিবহনে সংযুক্ত হয়েই জনপ্রিয়তা পাওয়া এই মেট্রোরেলের বীমা না থাকায়, ক্ষতিগ্রস্ত দুই স্টেশন মেরামতের ব্যয়ভার মেটানো হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থাৎ জনগণের ট্যাক্সের টাকায়।

উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল অর্থাৎ মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ এর প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ জাকারিয়ার সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০২২ সালের শেষ দিকে মেট্রোরেল চালু হলেও, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এর বীমা করেনি।'

তবে, মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প বীমার আওতায় ছিল বলে জানান তিনি।

গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে হামলা চালানো হয়।

মেট্রোরেল পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, হামলায় ওই দুই স্টেশনের টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, পুলিশ কন্ট্রোল রুম, কম্পিউটার এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ স্টেশনের ভেতরের সবকিছু গুড়ো গুড়ো হয়ে গেছে।
 
তিনি বলেন, 'এর মেরামত ব্যয় ৫০ কোটি টাকার বেশি হবে না।'

বীমা সুবিধার বিষয়ে কথা হয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র নন-লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি সাধারণ বীমা করপোরেশনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বীমা করা থাকলে এই মেরামত ব্যয় রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেওয়া লাগত না। এখন এই দুই স্টেশনের মেরামতের খরচ মেটাতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে।'

ভাঙচুরের পর মেট্রোসেবা বন্ধ হয়ে যায়। আগামী ১৭ আগস্ট থেকে ওই দুই স্টেশন বন্ধ রেখে মেট্রো আবার চালু হওয়ার কথা।

বন্ধ হওয়ার আগে প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখের বেশি মানুষ মেট্রোরেল ব্যবহার করতেন।

বীমা কভারেজ খরচের বোঝা কমাতে পারে উল্লেখ করে, সাধারণ বীমার কর্মকর্তা বলেন, 'বীমা সেবা না নেওয়া আমাদের দেশের পুরোনো সমস্যা। আমরা চাই প্রতিটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পদ বীমা করা হোক। কিন্তু আমাদের দেশে সেই চর্চা নেই।'

'বিদেশে মানুষ বীমা করে নিজেদের ঝুঁকি কমিয়ে ফেলে। কিন্তু আমরা ঝুঁকির মধ্যেই থাকি এবং এটি একটি বড় সমস্যা,' বলেন তিনি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তাও একই কথা বলেন।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার যদি বীমা করত, তাহলে মেরামতের খরচ মেটাতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ওপর চাপ দিতে হতো না।'

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ দেশে বীমার আওতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থার সহযোগিতা চেয়েছিল।

এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক চেয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠায় বীমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে দেশের প্রায় ১৭ কোটি জনগণের মধ্যে বীমার আওতায় আছে ১ শতাংশের কম জনগোষ্ঠী।

বীমা নিয়ন্ত্রকের চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় বীমা নীতি ২০১৪ অনুযায়ী জীবন বীমার আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কারখানা, আবাসিক এবং অফিস ভবন, কৃষি, মৎস্য ও পশুসম্পদ এবং আরও অনেক কিছু বীমার আওতায় আনা যায়।

মেট্রোরেলের বীমা না করার কারণ কী হতে পারে, জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও বীমা বিভাগের অধ্যাপক মো. মাইন উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগের সরকার সম্ভবত এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে এমন ধ্বংসাত্মক ঘটনা কখনোই ঘটবে না, তাই হয়ত তারা বীমা করেনি।'

'সরকারের উচিত সব গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পকে বীমার আওতায় আনার কথা মাথায় রাখা। এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে  তারা ক্ষতিপূরণ নিতে পারবে,' যোগ করেন তিনি।

দেশের প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত আংশিকভাবে চালু হয়। আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ গত বছরের অক্টোবরে চালু হয়। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লাইন ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায় নির্মিত হয়, যার বেশিরভাগ তহবিল ছিল জাপান থেকে নেওয়া ঋণ।

Comments

The Daily Star  | English
 Al Bakhera killings Al Bakhera killings

Killings in Chandpur: Water transport workers go on strike

Water transport workers has started an indefinite strike from midnight

4h ago