‘অংকে খুব ভালো ছিল, গণিত অলিম্পিয়াডেও অংশ নিয়েছিল আদিল’

১৯ জুলাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে মারা যায় আদিল
মো. আদিল। ছবি: সংগৃহীত

১৯ জুলাই। নারায়ণগঞ্জের ভূঁইগড়ের বাড়িতে সবার সঙ্গে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিল ১৬ বছরের মোহাম্মদ আদিল। দশম শ্রেণির ছাত্র আদিলের এক বন্ধু এসময় বাসা এসে জানায় কাছেই শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালাচ্ছে।

তখনই বাসা থেকে এক ছুটে বেরিয়ে যায় আদিল। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে যেখানে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করছিল সেদিকে ছুটে যায়। ছেলেকে আটকানোর বারবার চেষ্টা করেন বাবা-মা, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

'আগেরদিন যখন বাইরে বিক্ষোভ চলছিল আমরা ওকে বাইরে বেরোতে দেইনি। কিন্তু ১৯ তারিখে কিছুতেই বাড়িতে রাখতে পারিনি। আর যখন ফিরল তখন তো লাশ হয়েই ফিরল,' কান্নায় গলা ধরে আসা কণ্ঠে বলছিলেন আদিলের মা আয়েশা আক্তার।

বুকে দুইটা গুলি লেগেছিল। এসবি স্টাইল কম্পোজিট লিমিটেডের সামনে বিক্ষোভ করার সময় বুকে গুলিবিদ্ধ হয় আদিল। আদিলকে ধরাধরি করে লোকজন সাইনবোর্ড এলাকায় কাছের যে বেসরকারি হাসপাতালটি ছিল সেখানে নিয়ে যায়। চিকিৎসক জানিয়ে দেন মারা গেছে আদিল।

রাতেই ভূইগড়ে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয় আদিলকে।

তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল আদিল। বড় ভাই আবদুল্লাহ আল নোমান দুবাই থাকেন, আরেক ভাই বায়েজিদ আহমেদ ঢাকা মেডিকেল কলেজের নার্সিংয়ের ছাত্র।

'আদিল সেনাবাহিনীতে যেতে চেয়েছিল। অফিসার হবে, দেশের কাজ করবে। ওর মামা একজন সেনাসদস্য। তাকে দেখেই বলত একদিন আমিও আর্মি অফিসার হবো। আর সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতেই কিনা ছেলেটা মরে গেল,' বলছিলেন আদিলের মা।

আদিল ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল। পরের বছর এসএসসি পরীক্ষা। টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর গত ১৭ জুলাই মাদ্রাসার ছাত্রাবাস থেকে বাড়ি ফিরেছিল আদিল।

'পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছিল। ভয় পাচ্ছিলাম ও বাসার বাইরে থাকলে সমস্যায় পড়তে পারে। তাই হোস্টেল থেকে বাসায় নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তাও তো ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না আমি,' বলেন আয়শা আক্তার।

ছেলে পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল জানিয়ে মা আয়শা আক্তার বলেন, বেশি ভালো ছিল অংকে। গণিত অলিম্পিয়াডেও অংশ নিয়েছিল আদিল।

ছেলের সব সার্টিফিকেট খুব যত্ন নিয়ে দেখাচ্ছিলেন এই মা। বলছিলেন, সবই আছে, কেবল আমার আদরের ছেলেটাই নাই।'

Comments