জামায়াত-শিবিরের সব সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে
শুধু 'বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী' এবং এর ছাত্র সংগঠন 'ইসলামী ছাত্রশিবির' নয়, জামায়াত সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক বাতাবরণে থাকা সকল সংগঠন নিষিদ্ধের চিন্তা করছে সরকার। আজকের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।
গতকাল বুধবারের মধ্যেই জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি হবে, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক এমন ঘোষণা দিলেও সেটা হয়নি। জামায়াত সব সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে আইনি দিক চুলচেরা বিশ্লেষণের জন্য সময় লাগছে, তাই তাড়াহুড়া করে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেনি সরকার।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন চৌদ্দদলীয় জোট, সরকার এবং আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র এ বিষয়টি ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন।
অন্যান্য সংগঠন বলতে সরকার কী ভাবছে, এমন প্রশ্নের জবাবে একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জামায়াতের অনেক ধরনের সহযোগী সংগঠন আছে যেগুলো সম্পর্কে সচরাচর জানা যায় না। যদি শুধু জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে ওই সংগঠনগুলো বৈধ থেকে যাবে। যেমন ইসলামী ছাত্রী-সংস্থা, শ্রমিক, ডাক্তার ও আইনজীবীসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যুক্ত অনেক পেশাজীবী সংগঠন আছে। জামায়াত সংশ্লিষ্ট এ ধরনের সব সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রথমে জামায়াত-শিবিরকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ এর ১৮(১) ধারায় জামায়াত সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে সরকার।
নির্বাহী আদেশের বদলে আইনের মাধ্যমে নিষিদ্ধের বিষয়ে অপর একটি সূত্র জানায়, এর আগে বাংলাদেশে ছয়টি সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওইসব সংগঠনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় পরিচিত নেই, কিন্তু জামায়াতের সেটা আছে। এই সংগঠনটির ১৯৭১ সালের ভূমিকা বিশ্ববাসী জানে। তাই শুধু নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করলে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এদিক বিবেচনায় সরকার সংবিধান এবং আইন উভয় ক্ষেত্র বিবেচনায় রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করবে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ পাঁচ সংগঠন
২০০৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম নিষিদ্ধ করা হয় 'শাহাদাত-ই-আল হিক্মা পার্টি বাংলাদেশ'কে। এই সংগঠনটির ঠিকানা দেওয়া আছে রাজশাহী মহানগর এলাকার হড়গ্রাম নতুনপাড়া বাইপাস এলাকা, থানা-রাজপাড়া।
২০০৫ সালের ২৩ ফ্রেব্রুয়ারি একইসঙ্গে দুইটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। সংগঠন দুটির নাম হচ্ছে- জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি) এবং জামা'তুল মুজাহেদীন। এই দুইটি সংগঠন নিষিদ্ধ করার সময় 'সুনির্দিষ্ট ঠিকানাবিহীন' বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
'হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী' শীর্ষক আরেকটি 'সুনির্দিষ্ট ঠিকানাবিহীন' সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয় ২০০৫ সালের ১৭ অক্টোবর।
২০০৯ সালের ২২ নিষিদ্ধ হয় 'হিযবুত তাহরীর'।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে জঙ্গি সংগঠন 'আনসারুল্লাহ বাংলা টিম' নিষিদ্ধ করে সরকার।
উল্লিখিত ছয়টি সংগঠনের মধ্যে প্রথম পাঁচটি 'সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯'-এর তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নাম তফসিলে উল্লেখ নেই।
Comments