১৬ বছরের শিক্ষার্থীর শরীরে ৭০টি ছররা গুলি

খালিদ হাসান
খালিদ হাসান। ছবি: সংগৃহীত

১৮ জুলাই। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ রাজধানীর আজিমপুর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার মসজিদে আসরের নামাজ শেষে লালবাগের আমলিগোলার বাসায় ফিরছিল খালিদ হাসান। ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী খালিদ।

তবে কয়েক পা এগোতেই ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোর দেখতে পায় আন্দোলনকারীদের একটা দল কলোনির ভেতরে দৌড়ে এসে ঢোকে আর ঢুকেই এদিক সেদিক ছড়িয়ে পড়ে।

হতভম্ব হয়ে খালিদ কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করে কী ঘটছে।

আর তখনই পুলিশ কোথা থেকে এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে।

আরও তিন-চারজনের সঙ্গে সেখানে গুলিবিদ্ধ হয় খালিদও। সেখানেই মারা যান খালিদ । তার শরীরে, পেটে আর বুকে ছিল শটগানের অন্তত ৭০টি ছররা গুলির চিহ্ন।

'পুলিশ তো আমার ছেলের পায়ে গুলি করতে পারত। যদি পায়ে গুলি করত তাহলে তো পঙ্গু হয়েও বেঁচে থাকত আমার ছেলেটা। পুলিশ পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেটাকে হত্যা করেছে,' কান্নায় ভেঙে পড়ে দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন খালিদের বাবা কামরুল হাসান।

তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের কারণে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তিনি তার ছেলেকে বাইরে যেতে নিষেধ করেছিলেন।

'খালিদ শুধু নামাজের জন্য বের হতো।'

'আমার ছেলে কারও জন্য হুমকি ছিল না। কোনো বিক্ষোভেও অংশ নেয়নি। পুলিশ অন্যায়ভাবে আমার নিরপরাধ ছেলেকে গুলি করেছে,' বলছিলেন লালবাগের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক কামরুল।

সেদিনের একজন প্রত্যক্ষদর্শী যিনি নিজেও ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন বলছিলেন, সবকিছু এত দ্রুত ঘটেছিল যে আমরা কী ঘটছে তা বুঝতে পারিনি। বিক্ষোভকারীরা যখন দৌরে ভেতরে আসছিল আমরা তখন কলোনি থেকে বের হচ্ছিলাম। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক পুলিশ সদস্য আমাদের দিকে বন্দুক তাক করে এবং গুলি চালায়।

তার চোখের খুব কাছে ছররা গুলি এসে আসে।

ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, তাকে ও খালিদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় কয়েকজন।

খবর পেয়ে খালিদের বাবা কামরুল ঢামেক হাসপাতালে যান। তিনি বলেন, 'আমি দেখি ও হাসপাতালের বেডে পড়ে আছে। ওর নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল। আমার ছেলেটা মরে গেছে।'

তবে ছেলে হারানোর মধ্যেই এ দুঃখের শেষ নয়। তিনি বলেন, হাসপাতালের মর্গ থেকে ছেলের লাশ আনতেও তাদের অনেক ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।

'থানার ছাড়পত্র ছাড়া হাসপাতাল ছেলের লাশ দেবে না। সেদিন রাত আড়াইটার দিকে আমি ছাড়পত্রের জন্য লালবাগ থানায় যাই। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের পর বলে পরদিন সকাল ৯টায় যেতে,' ডেইলি স্টারকে বলেন কামরুল।

'পরদিন আমি আবার গেলাম কিন্তু তারা কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি। অবশেষে দুই দিন পর তারা ছাড়পত্র দিলে আমি আমার ছেলের লাশ নিতে পারি। এই সময়ে আমি দিনে চার থেকে পাঁচবার থানায় গেছি।'

২১ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কামরুল হাসানকে তার ছেলের লাশ হস্তান্তর করা হয়। ফরিদপুরের ভাঙ্গার ভদ্রাসন গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় খালিদকে।

কামরুল হাসান বলেন, 'অনেক আশা ছিল খালিদ আইনজীবী হবে। আমরা গরিব মানুষ। ছেলে চেয়েছিল বড় হয়ে আমাদের যাতে একটু সাহায্য করতে পারে। এখন আমি কার কাছে বিচার চাইব?'

খালিদের মা শুধু একটি কথাই বলেছেন।

'তারা আমার ছেলেটাকে বাঁচতে দিল না।'

Comments

The Daily Star  | English
gold price hike in Bangladesh

Why gold costs more in Bangladesh than in India, Dubai

According to market data, gold now sells for $1,414 per bhori in Bangladesh, compared to $1,189 in India, $1,137 in Dubai

2h ago