আল্লাহর কাছে বিচার চাই, আর কারও কাছে না: গুলিতে নিহত শিশু সাদের বাবা

বাহাদুর খান। ছবি: স্টার

২০ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টা। ওইদিন সাভারে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হচ্ছিল। সাভারের শাহীনবাগ এলাকার ভাড়া বাসার ছাদে ফুফাত ভাইয়ের সঙ্গে খেলতে যায় শিশু সাদ মাহমুদ (১৪)। সেখান থেকে পাশের চাপাইন সড়কে ধোঁয়া দেখতে পায় সাদ। কৌতুহলবশত সড়কের নিউ মার্কেটের পাশে গেলে গুলিতে গুরুতর আহত হয় সে।

পরে স্থানীয়রা সাদকে উদ্ধার করে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

রোববার দুপুর ১টায় মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে সাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে উঠোনে নির্বাক বসে থাকতে দেখা যায় সাদের বাবা বাহাদুর খানকে।

সাদের বিষয়ে জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমার মতো আর কারও সন্তান যেন পুলিশের গুলিতে মারা না যায়। আমাকে সব দিলেও আমি আমার সন্তানকে আর ফিরে পাব না।'

চোখের পানি মুছতে মুছতে বাহাদুর আরও বলেন, 'ইচ্ছে ছিল একমাত্র ছেলে কোরআনের হাফেজ হবে। দুই পাড়া মুখস্তও করেছিল। আমাদের স্বপ্ন পূরণ হলো না। আমার ছেলে হত্যার বিচার আমি শুধু আল্লাহর কাছে চাই। আমার ছেলে হত্যার বিচার যেন আল্লাহ করেন, আর কারও কাছে বিচার চাই না।'

গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার ধল্লা খানপাড়ায় হলেও ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার জন্য বাহাদুর খান সাভারের শাহীনবাগ এলাকায় বাসা ভাড়া করে পরিবার নিয়ে থাকেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী। তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে ছিল সাদ। বড় মেয়ে তাসলিমা খানম নাজনীন (২০) সাভারে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সাদ সাভারের শাহীনবাগ এলাকায় জাবালে নূর দাখিল মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। আর ছোট মেয়ে আফরোজা খানম নুসরাতও (৮) একই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।

বাহাদুর খান বলেন, 'ওইদিন আমার ছেলেকে বাসার ছাদে দেখতে না পেয়ে সড়কে ছুটে যাই। সেখানে দেখতে পাই আমার ছেলের জুতা পড়ে আছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার কলিজার টুকরা আর নাই। বাম পায়ের উরুতে গুলি লেগেছে। আমার ছেলের তো কোনো অপরাধ ছিল না। তাহলে কেন পুলিশ আমার সন্তানকে গুলি করল?'

একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা হালিমা আক্তার। কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই তিনি।

স্বজনরা জানান, ওইদিনই গভীর রাতে সাদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। পরের দিন সকালে ধল্লা গ্রামের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

65% of suicide victims among students are teenagers: survey

At least 310 students from schools, colleges, universities and madrasas died by suicide last year

3h ago