কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় যশোর শহর

ছবি: সংগৃহীত

ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার না করা ও অব্যবস্থাপনার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় গোটা যশোর শহর। গতকাল শনিবার জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে সর্বোচ্চ ১২০ মিলিমিটার মাত্রায়। আজ রোববারও শহরের অনেক রাস্তা থই থই করছে পানিতে।

শনিবারের টানা তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেছে যশোর। শহরের বেশিরভাগ এলাকায় জমে আছে হাঁটু সমান পানি। শহরের বিভিন্ন স্থানে বাসাবাড়িতে বর্ষার পানি ঢুকে পড়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, যশোর পৌরসভা পানি নিষ্কাশনের বিভিন্ন ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানিতে তলিয়ে যায় গোটা শহর।

গত সাত বছরে শুধু শহরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৪০ কিলোমিটার 'আরসিসি' ড্রেন। সেসব ড্রেন এখন শহরবাসীর জন্য ফাঁদ। ড্রেনগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় বৃষ্টি হলেই শহরের বিভিন্ন এলাকা যায় তলিয়ে। এতে কর্মজীবীসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

যশোর পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, সিআরডিপি (সিটি রিজন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট) ও ইউজিআইআইপি-৩ (তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ সেক্টর প্রকল্প) প্রকল্পের মাধ্যমে এসব ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। ড্রেন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা। কাঁচা-পাকা সব মিলিয়ে শহরে প্রায় ২৪৬ কিলোমিটারজুড়ে ড্রেন ব্যবস্থা রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌরসভার এসব ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। বেশিরভাগ ড্রেনের স্লাব ঠিক নেই। ফলে খুব আস্তে পানি যায় ড্রেনে। ড্রেনের ভেতর পানি স্থির হয়ে জমে থাকে। বেশিরভাগ ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে আছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলে ড্রেনের পানি সরতে চায় না।

শহরের বেশিরভাগ বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্যের ট্যাংকগুলো পাইপ দিয়ে ড্রেনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে যখন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় তখন ড্রেন থেকে ময়লার পানি মিশে পানির রং কালো হয়ে যায়। জমে থাকা পানির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করায় এলাকাবাসীদের নানা চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।

শহরের অন্তত ৩০টি সড়কে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। শহরে তলিয়ে যাওয়া এলাকাগুলো হচ্ছে—খড়কি, শাহ্ আবদুল করিম সড়ক, স্টেডিয়াম পাড়া, পিটিআই, নাজির শংকরপুর, খড়কি রূপকথা মোড় থেকে রেললাইন, ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে পাইপ পট্টি, বেজপাড়া চিরুনিকল, মিশনপাড়া, বিমানবন্দর রোড ও ষষ্ঠীতলাপাড়া।

বর্তমানে জমে থাকা পানি সড়ক ছাপিয়ে ঢুকে পড়েছে বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে আছেন শহরের মানুষ।

ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, 'পৌরসভা অপরিকল্পিতভাবে ড্রেন নির্মাণ করেছে। নির্মাণের পর ড্রেন সংস্কার ও পরিষ্কার না করার সামান্য বৃষ্টি হলে তলিয়ে যায় শহর। মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার হন পৌরবাসী।'

বেজপাড়ার বাসিন্দা জিল্লুর রহমান বলেন, 'সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া ড্রেন নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। পৌরসভার দায়িত্বহীনতার কারণে যথাসময়ে ড্রেন পরিষ্কার না করায় শহরের পানি বেরোতে পারছে না। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি বের হতে না পেরে তলিয়ে যায় শহর।'

শহরের পাইপপট্টি এলাকায় রাস্তার দুই ধারের দোকানগুলোয় পানি প্রবেশ করেছে। দোকানের ভেতরে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে আছে। বিভিন্ন উপায়ে দোকানের ভেতরে জমা পানি পরিষ্কার করছেন দোকানের কর্মীরা।

শহরের ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান বলেন, 'কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরের সড়কগুলো তলিয়ে গেছে। সড়কের পাশে ড্রেন থাকলেও পরিষ্কার না করায় ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে আছে। সরতে না পারায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমে আছে শহরে।'

তিনি বলেন, 'সড়ক নিচু, আর ড্রেনগুলো নির্মাণ করা হয়েছে উঁচু করে। ড্রেনের ভেতরের স্তরও সমতল না। তাই শহরের পানি সরতে পারছে না।'

যশোর পৌরসভার শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা গোলাম মাজেদ বলেন, 'বাড়িঘরে পানি উঠেছে। ঘরের ভেতরে হাঁটুপানি জমে আমরা থাকতে পারছি না। আগে নালার মাধ্যমে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। ২০১০ সালে হরিণার বিলে যশোর মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। এরপর আশপাশে আরও অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিষ্কাশিত হতে পারছে না। ফলে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।'

শহরের খড়কির শাহ্ আবদুল করিম সড়কে সরকারি এমএম কলেজের দক্ষিণ গেট থেকে খড়কি মোড় হয়ে পীরবাড়ি কবরস্থান পর্যন্ত হাঁটু সমান পানি জমেছে। খড়কি দক্ষিণপাড়া-পশ্চিমপাড়া, হাজামপাড়া ও খড়কি রেললাইন পাড়ার বাসিন্দাদের বাড়ির উঠানেও হাঁটুপানি।

সড়কে চলাচলকারী রিকশাযাত্রী ও মোটরসাইকেল আরোহীদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। জুতা হাতে নিয়ে অনেককে হাঁটুপানিতেই চলাচল করতে দেখা যায়।

খড়কি এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ কুমার সরকার বলেন, 'বৃষ্টিতে ছাত্রাবাস, বাসাবাড়ি ও দোকানে হাঁটুপানি জমে আছে। খাল বেদখল, পর্যাপ্ত নর্দমার অভাবে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অচল। দীর্ঘদিনেও পৌরসভা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল করতে ব্যর্থ হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় গোটা শহর।'

এদিকে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শরীফ হাসান বলেন, 'শহরবাসীর অবহেলার কারণেও ড্রেনের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তা, ড্রেন সংস্কার ও নির্মাণের জন্য এমজিএসপি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মুক্তেশ্বরীর সঙ্গে সংযোগ খাল স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।'

যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দার গণী খান পলাশ বলেন, 'শহর উন্নয়নে প্রকল্পের কয়েক কোটি টাকার কাজ দ্রুতই শুরু হবে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থারও উন্নয়ন করা হবে এই কাজে। আগামীতে শহরের সড়কগুলোতে পানিবদ্ধতার সমস্যা কেটে যাবে। তা ছাড়া শহরের ড্রেনগুলোর মুখ পরিষ্কারে কাজ করছে কর্মীরা।'

যশোরের মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাত্র তিন ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলায় চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় এদিন। আগামী কয়েকদিন এটি অব্যাহত থাকতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Govt Logo

All 64 DCs protest suggested change to promotion criteria for deputy secy post

The Bangladesh Administrative Service Association (Basa) has also issued a statement protesting the proposal

1h ago