কোরিয়া এখন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কোরিয়ার এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকয়ের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইউন, হি সুং। ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোরিয়া বাংলাদেশের এক অসাধারণ উন্নয়ন ও বিনিয়োগ অংশীদার হয়ে উঠেছে।

কোরিয়ার এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকয়ের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইউন, হি সুং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় সংসদ ভবনের কার্যালয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম সরকার সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কোরিয়ান সরকারের প্রতি তাদের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, যা বছরে প্রায় ৩০০-৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে কালুরঘাট পয়েন্টে কর্ণফুলী নদীর উপর রেল-কাম-রোড ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়নের চুক্তিতে সই করার জন্য ইউনকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, সেতুটি চট্টগ্রাম শহরের যানজট সমস্যার সমাধান করবে এবং দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য মাতারবাড়ি (সোনাদিয়া) গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য একটি প্রশস্ত করিডোর তৈরি করবে।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পে তাদের রেয়াতি অর্থায়নের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি দুইবার তার কোরিয়া সফরের কথাও স্মরণ করেন।

২০১০ সালে তার সফরের সময় শেখ হাসিনা কোরিয়াকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গভীরভাবে জড়িত 'এক বিশেষ বন্ধু' বলে অভিহিত করেছিলেন।

কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক চেয়ারম্যান ও সিইও ইউন, হি সুং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার ঢাকা সফর ফলপ্রসূ হওয়ায় অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের চলমান চমকপ্রদ উন্নয়ন যাত্রা দেখে তিনি তার সফরকে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ বলে মনে করেন।

কোরিয়ান এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সিইও বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জিডিপি, চলমান উন্নয়নের গতিপথ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস অতিমারি সত্ত্বেও ভালোভাবে বজায় রয়েছে।

তিনি শেখ হাসিনার দারিদ্র্য হ্রাস এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে সম্পূর্ণভাবে উত্তরণের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।

ইউন বাংলাদেশে কোরিয়ান বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রসারে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যা উভয় দেশের ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি ধারণ করে।

কোরিয়ান প্রতিনিধি দল ইডিসিএফ (ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ফান্ড) এবং ইডিপিএফ (ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফান্ড) এর অধীনে ২০২৩ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্প ও কর্মসূচিতে অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশকে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

তারা বাংলাদেশে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতা ও অর্থায়ন সম্প্রসারণেও তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

ইউন এই সহযোগিতার পারস্পরিক সুবিধাগুলি তুলে ধরেন। তার মতে, বাংলাদেশে মানবসম্পদ হিসেবে প্রচুর যুবক রয়েছে, অন্যদিকে কোরিয়ায় ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনসংখ্যার কারণে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, উভয় দেশ এই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে একে অপরের পরিপূরক হতে পারে, যা প্রকৃতপক্ষে উভয় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেই সহায়ক হবে।

ইউন বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও উন্নয়ন ও জোরদারে তার গভীর আগ্রহ প্রকাশ করলে শেখ হাসিনা তা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেন।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে তার সঙ্গে বৈঠকের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি দুই দেশের জনগণের জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত ও গভীর করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম সরকার জানান, উভয় পক্ষের পারস্পরিক সমৃদ্ধশালী  ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় বৈঠকটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ  হয়েছে।

বৈঠকে অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

Comments