শিলাইদহে অরক্ষিত কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনা

দীর্ঘদিন অযত্নে অবহেলায় থাকার পর বর্তমানে রবীন্দ্র কাচারিবাড়ীর সংস্কার কাজ চলছে। ছবি: স্টার

আজ ২৫শে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। প্রতিবছরের মতো এ বছরও কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ীতে আয়োজন করা হয়েছে দুই দিনব্যাপী রবীন্দ্র উৎসব।

শিলাইদহ কুঠিবাড়ীতে যখন রবীন্দ্র উৎসবের জমজমাট আয়োজন চলছে তখন কুঠিবাড়ির পাশেই অরক্ষিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত নানা স্থাপনা।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পদ্মা নদী বেষ্টিত শিলাইদহ কুঠিবাড়ীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কবিগুরুকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক ও গবেষক অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শিলাইদহ কুঠিবাড়ীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কবিকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। কবিগুরুর সাহিত্যে এর প্রভাব রয়েছে বিস্তর। শিলাইদহ কুঠিবাড়ী থেকে পদ্মা নদী দিয়ে তার প্রিয় পদ্মা বোটে করে কবি শাহজাদপুর, পতিসর কাচারিবাড়ীতে ভ্রমণ করতেন। নদীপথে পদ্মা, যমুনা, ইছামতীসহ উত্তরের বিভিন্ন নদ নদীতে ঘুরে বেরিয়েছেন, দেখেছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাধারণ মানুষের জীবন যাপন কবিকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে।

ড. আব্দুল আলীম বলেন, কবিগুরু শুধু সাহিত্য রচনা আর জমিদারি কাজের জন্যই নয়, এ অঞ্চলের মানুষের জন্যও ভেবেছেন। ফলে কুঠিবাড়ী কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য অনেক স্থাপনা ও স্মৃতিচিহ্ন।

শিলাইদহ ঘুরে দেখা গেছে, কুঠিবাড়ীর কাছেই পদ্মা নদীর তীরে দীর্ঘদিন ধরে অযত্নে অবহেলায় অরক্ষিত হয়ে পড়ে রয়েছে কবিগুরুর পরিবারের প্রতিষ্ঠিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

দ্য মহর্ষী চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি নামের দাতব্য এ চিকিৎসালয় থেকেই প্রজাদের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হতো। কবিগুরু যখন শিলাইদহে থাকতেন তিনি তখন নিজেই এখান থেকে প্রজাদের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা দিতেন। কবিগুরুর স্মৃতিধন্য এ চিকিৎসালয়টি এখন একটি পরিত্যক্ত ভবন।

কবিগুরুর স্মৃতিধন্য চিকিৎসালয়টি এখন একটি পরিত্যক্ত ভবন। ছবি: স্টার

শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী তারেক হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ৮০'র দশক পর্যন্ত ঐতিহাসিক এ চিকিৎসালয়টি কোনরকমে টিকে ছিল, অযত্ন অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি এখন পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে।

চিকিৎসালয়ের আশেপাশের জায়গাগুলোও দখল হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

দাতব্য এ চিকিৎসালয়টির পাশেই রয়েছে কবিগুরুর পারিবারিক জমিদারির কাচারিবাড়ী। দীর্ঘদিন অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকতে থাকতে এই কাচারিভবনটিও বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। দখল হয়ে গেছে কাচারিবাড়ীটির বেশিরভাগ জমি।

সম্প্রতি সরকার এ কাচারিবাড়ীটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুরোনো আদলেই সংস্কার করা হচ্ছে এটি।

শিলাইদহ কুঠিবাড়ীর রক্ষক ও প্রত্নতাত্ত্বিক কর্মকর্তা মো. আল আমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রায় ৫ একর জায়গার ওপর নির্মিত কাচারিবাড়ির মাত্র ৬ শতক জায়গা তাদের দখলে রয়েছে।

গত অর্থবছর থেকে এই কাচারিবাড়ীটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাজ এখনও চলমান আছে। সংস্কার কাজ শেষ হলে এখানেও যাদুঘর গড়ে তোলা হবে বলে জানান তিনি।

রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনাগুলো অরক্ষিত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আল আমিন বলেন, ২০১৮ সালে কবির স্মৃতি বিজড়িত কাচারিবাড়ী ও দাতব্য চিকিৎসালয়টি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ইতোমধ্যে কাচারিবাড়ীর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে পর্যায়ক্রমে দাতব্য চিকিৎসালয়টিও সংস্কার করে সংরক্ষণ করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত কুষ্ঠিয়া শহরের রবীন্দ্র লজ (ভবন) প্রত্নতাত্বিক স্থাপনার তালিকাভুক্ত হলেও এখনও তা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি বলে জানান প্রত্নতত্ব কর্মকর্তা মো. আল আমিন।

রবীন্দ্র গবেষক ও লেখক হাবিবুর রহমান স্বপন বলেন, কুষ্টিয়ার শিলাইদহসহ কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত প্রতিটি স্থাপনা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।

আগামী প্রজন্মের কাছে এগুলো হবে কবিগুরুকে নিয়ে গবেষণার বিষয়বস্তু। এজন্য কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত প্রতিটি স্থাপনা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার দাবি জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Hasnat Abdullah warns media

Hasnat warns media against airing Hasina’s speech

Vows to free Bangladesh from the 'pilgrimage site of fascism'

2h ago