ঈদযাত্রা: দক্ষিণাঞ্চলের রুটে টিকিটে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি বাসভাড়া

গাবতলী বাস টার্মিনালের টিকিট কাউন্টারে আজ শনিবার সকালের চিত্র। ছবি: পলাশ খান/ স্টার

ঢাকার রায়েরবাগের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে বিআরটিসি বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি বরিশাল যাবেন।

তিনি জানান, র্নিধারিত ভাড়া ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকায় চারটি টিকিট কিনতে হয়েছে তাকে।

সিরাজুলের মতোই টার্মিনাল এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে আরও অনেক যাত্রীকে। তাদের অনেকের অভিযোগ, ঈদের কারণে বাস অপারেটররা তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন।

ছেলে ও ছোট বোন আলেয়া বেগমকে নিয়ে অপেক্ষা করা রাশিদা বেগমও একই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, 'আমি প্রতি মাসে বিআরটিসির এসি বাসে ৬০০ টাকা ভাড়ায় বরিশাল যাতায়াত করি। কিন্তু এখন আমাকে প্রতি টিকিটের জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা দিতে হয়েছে।'

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসির বরিশাল বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মো. দেলোয়ার বলেন, 'ঢাকায় ফেরার সময় আমাদের বাসে পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় আমরা যাত্রীদের কাছ থেকে একটু বেশি ভাড়া নিচ্ছি।'

গোল্ডেন লাইন পরিবহনের যাত্রী মো. আশিক বলেন, 'বছরজুড়েই অনেক পরিবহন শ্রমিককে আক্ষরিক অর্থেই যাত্রীদের বাসে টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। কিন্তু ঈদ ঘনিয়ে এলে যাত্রীদের সঙ্গে তাদের আচরণে পরিবর্তন আসে। তারা ছুটিতে আসা যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য করে।'

'ঢাকা-বরিশাল রুটে ননএসি বাসে যাতায়াতের জন্য নিয়মিত ভাড়া ৫০০ টাকা। কিন্তু আজ (গতকাল) টিকিটের জন্য আমাকে অতিরিক্ত ২০০ টাকা দিতে হয়েছে,' বলেন এই যাত্রী।

গোল্ডেন লাইন পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের ম্যানেজার মো. জামাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদের মৌসুমে আমাদের বাসগুলো প্রায় খালি ঢাকায় ফিরে আসে। তাই আমরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না করে পারছি না।'

বিআরটিসির পরিচালক (কারিগরি) কর্নেল মোহাম্মদ মোবারক হোসেন মজুমদার বলেন, বাস অপারেটররা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে কিছু অভিযোগ পেয়েছি।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের বাস যারা লিজে চালাচ্ছে তারাই এটা করছে। আমরা আজ শনিবার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। এ বিষয়ে বাস অপারেটরদের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেব।'

গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়েই প্রায় একই অবস্থা দেখা যায়। খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর ও মাগুরাগামী যাত্রীদের শ্যামলী ট্রাভেলস, শ্যামলী এনআর ট্রাভেলস, সাতক্ষীরা লাইন, এসপি পরিবহন এবং কে লাইন পরিবহনের প্রতিটি টিকিটের জন্য অতিরিক্ত ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা দিতে হয়েছে।

সোহাগ পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, বাস অপারেটর যশোরের নিয়মিত ভাড়া ৬৫০ টাকার পরিবর্তে ৭৫০ টাকায় অগ্রিম টিকিট বিক্রি করছে।

কাউন্টারের বুকিং সহকারী মো. আসিফ দাবি করেন, তারা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেন না।

তিনি বলেন, 'যাত্রীরা আমাদের কাছ থেকে টিকিট কিনলে তাদের বাড়তি টাকা দিতে হয় না। কিন্তু কেউ কালোবাজার থেকে টিকিট কিনলে আমাদের কিছু করার নেই।'

এসবি সুপার ডিলাক্সের এসি বাসের কুষ্টিয়া যাওয়ার চারটি টিকিট কিনেছেন ইকবাল অনিক নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, বাসভাড়া ৯০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করেছে।

এসবি সুপার ডিলাক্সের টিকিট কাউন্টারের একজন কর্মী জানান, তারা তাদের মালিকের নির্দেশে ভাড়া বাড়িয়েছেন।

এদিকে ঈদের ছুটিতে আসা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে একটি পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।

কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, কোনো যাত্রী তাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।

Comments

The Daily Star  | English
Nahid Islam on India-Bangladesh relations

Anti-Bangladesh politics will not serve India's interests: Nahid

Calls on 'Indian elites' to cease false propaganda against Bangladesh

2h ago