সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে ১৭ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত, বৃহস্পতিবার থেকে বাড়তে পারে যাত্রীচাপ

ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের ভুইয়াগাতি এলাকায় ফ্লাইওভারের কাছের সড়কে সংস্কার কাজ চলছে। ছবি: স্টার

দুর্ভোগের শঙ্কা মাথায় নিয়েই প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে উত্তরের মহাসড়কে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রীদের ভিড় বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

যাত্রাপথে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে চার লেনের কাজ চলমান থাকায় এ মহাসড়কের কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ইন্সপেক্টর মো. মনিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ভুইয়াগাতি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিকটবর্তী সড়কে এখনও সংস্কার কাজ চলছে। তবে ঈদযাত্রা শুরু হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে সড়ক বিভাগ।

উত্তরের সবচেয়ে বেশি জেলার যানবাহন এ মহাসড়ক দিয়েই যাতায়াত করবে ফলে এ মহাসড়কে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এছাড়া হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় একটি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করে মহাসড়কের চতুর্দিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হবে।

উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার গাড়ি এই গোলচত্বর থেকেই নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে যাত্রা করে ফলে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত মহাসড়কে যানবাহনের চাপ সবচেয়ে বেশি থাকে বলে জানান তিনি।

এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে সিরাজগঞ্জে উত্তরের মহাসড়কগুলোতে ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তরের মহাসড়কগুলোর ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান নির্ধারণ করে ইতোমধ্যে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

চিহ্নিত স্থানগুলোতে জেলা পুলিশের ৭০৩ জন পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করবে, পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশের প্রায় ১৫০ সদস্য মোতায়েন থাকবে।

বৃহস্পতিবার থেকেই মহাসড়কে ভিড় বাড়তে শুরু করবে বলে মনে করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি জানান, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষকে নিরাপদে ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা দিতে বৃহস্পতিবার থেকেই মাঠে নামবে পুলিশ।

অন্যদিকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বঙ্গুবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়ক, ঢাকা বগুড়া মহাসড়ক, হাটিকুমরুল-বনপারা মহাসড়ক ও ঢাকা-পাবনা মহাসড়কসহ সিরাজগঞ্জের ৮৮ কিলোমিটার মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সমন্বয়ে গঠিত কমিউনিটি পুলিশও কাজ করবে।

প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি ৩০ জনের কমিউনিটি পুলিশও মহাসড়কের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করবে। 

তবে এত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও মহাসড়কের চলমান সংস্কার কাজ ও আনফিট যানবাহন চলাচলের কারণে দূরপাল্লার চালকরা ঝঞ্ঝাটমুক্ত যানবাহন চলাচলের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছেন না।

ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের বাসচালক ফারুক হোসেন বলেন, চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তে চার লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করায় সহজেই পার হতে পারছেন তারা, বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়েই কিছুটা দুর্ভোগে পড়তে হয়। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় ধীরে যানবাহন চালাতে হয় ফলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে যানবাহনের চাপ বাড়ে। পাশাপাশি মহাসড়কে অনেক সময় আনফিট যানবাহন চলাচল করায় প্রায়ই যানবাহন বিকল হয়ে পরায় দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়। ঈদযাত্রাকে ঝঞ্ঝাটমুক্ত রাখার জন্য মহাসড়কে সংস্কার কাজের পাশাপাশি আনফিট যানবাহন চলাচল বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার জানান, আনফিট যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে ইতোমধ্যে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সচেতন করা হয়েছে। 

মহাসড়কে কোথাও যানবাহন দাঁড়াতে দেওয়া হবে না, কোন যানবাহন বিকল হয়ে পড়লে বা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা হলে ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহন দ্রুত সরিয়ে মহাসড়ক সচল করা হবে। এজন্য তিনটি উদ্ধারকারী রেকার, চেইন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মজুত থাকবে। উদ্ধারকারী টিম সবসময় প্রস্তুত রাখা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।

এদিকে সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, এ বছর মহাসড়কের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে, এছাড়া সাসেক প্রকল্পের অধীনে চার লেনের কাজ চলমান থাকায় প্রয়োজনীয় স্থানে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। আইন মেনে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন নিয়ে মহাসড়কে চলাচল করলে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে না বলে মনে করেন সড়ক কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক দিয়ে উত্তরের ১৬ জেলাসহ প্রায় ২২টি জেলায় যাতায়াত করে। ঈদের সময় প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার যানবাহন চলাচল করে ফলে ঈদের সময় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে প্রতি বছর বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দুর্ভোগে পড়তে হয়।

তবে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের আশা গতবারের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ বছর ঈদযাত্রা অপেক্ষাকৃত আরামদায়ক ও স্বস্তির হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Not for kidney patient, they tried to rob bank for iPhones

Police say three robbers fabricated a story claiming that the robbery was to save a kidney patient

1h ago