জিম্মি জাহাজ নিয়ে খবর প্রকাশে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ ক্যাপ্টেন ফরিদের

এমভি জাহান মনি জাহাজের সেই সময়কার মাস্টার ক্যাপ্টেন ফরিদ আহমেদকে ওই ১০০ দিনের বিভীষিকাময় জিম্মি জীবনের কথা আবারো মনে করিয়ে দিল এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের জিম্মি নাবিকরা।

২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর, আরব সাগর থেকে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে আটক হয় বাংলাদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি জাহান মনি। মুক্তি পায় ২০১১ সালের ১১ মার্চ। প্রায় ১০০ দিন জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ছিলেন জাহাজের ২৫ জন নাবিক এবং প্রধান কর্মকর্তার স্ত্রী।

এমভি জাহান মনি জাহাজের সেই সময়কার মাস্টার ক্যাপ্টেন ফরিদ আহমেদকে ওই ১০০ দিনের বিভীষিকাময় জিম্মি জীবনের কথা আবারো মনে করিয়ে দিল এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের জিম্মি নাবিকরা।

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে ফিরে এসে পরবর্তীতে জাহাজে আর চাকরি করেননি দক্ষ এই নাবিক। ২০১১ সাল থেকেই কানাডায় পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে পাড়ি জমিয়েছেন ক্যাপ্টেন ফরিদ।

সেই দুর্বিষহ সময়ের কথা স্মরণ করে ক্যাপ্টেন ফরিদ বলেন, 'আমি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ থেকে জানতে পেরেছি সোমালিয়ার জলদস্যুরা বাংলাদেশি একটি বাণিজ্যিক জাহাজ জিম্মি করেছে। বিষযয়টি খুবই দুঃখজনক। আমি এটি নিয়ে চিন্তিত।'

এই মুহূর্তে নাবিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের যথাসম্ভব ধৈর্যশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেন, 'জাহাজে অবস্থান করা নাবিকদের কোনো ভুল পদক্ষেপের ফলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। জলদস্যুদের সাথে যথাসম্ভব সহযোগিতামূলক আচরণ করা ভালো।'

জিম্মি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি আরও বলেন, 'সোমালিয়ার জলদস্যুদের অনেকেই নাবিকদের সাথে রুঢ় আচরণ করে। নাবিকদের পরিবারের সদস্যদেরকে বার্তা পাঠাতে বাধ্য করে জলদস্যুরা। যেন জাহাজের মালিক পক্ষ দ্রুত মুক্তিপণ পাঠায়। সোমালিয়ার জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি আটকের পর ইতোমধ্যেই তিন দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো মুক্তিপণ দাবি করেনি বলে জানতে পেরেছি। জলদস্যুদের পক্ষ থেকে মুক্তিপণ চাওয়া কিংবা যোগাযোগ না করা পর্যন্ত জাহাজের মালিক পক্ষের কিছু করার নেই।'

ক্যাপ্টেন ফরিদ আরও বলেন, 'সচরাচর জাহাজ জিম্মি করার ২/৩ দিনের মধ্যেই জলদস্যুরা মধ্যস্থতাকারী (আইনজীবী) নিয়োগ করে জাহাজের মালিক পক্ষের সাথে যোগাযোগ করে থাকে। এমভি জাহান মনি জাহাজ জিম্মির ঘটনার সময়ও এমনটা হয়েছিল। এই মধ্যস্থতাকারী আইনজীবীরাই মুক্তিপণের বিষয়ে যোগাযোগ করবে জাহাজ কর্তৃপক্ষের সাথে।'

জিম্মি নাবিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'জাহাজে কতদিন জিম্মি অবস্থায় থাকতে হবে তার কোনো নির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানা নেই। তাই জাহাজে মজুদকৃত খাদ্য, পানি এবং জ্বালানি রেশনিং করে ব্যবহার করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে খাবার পানি এবং জ্বালানি ব্যবহারে বেশি সতর্ক হতে হবে। কারণ, জাহাজের জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে অনেক বিপদ নেমে আসে নাবিকদের জন্য। জাহাজে জ্বালানি না থাকলে জেনারেটর চালানোর কোনো উপায় থাকে না। জেনারেটর না চললে জাহাজের ফ্রিজে থাকা সব খাবার নষ্ট হয়ে যায়। তখন খাদ্য সংকট দেখা দেয়।'

'আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে বর্তমানে ২৩ জন নাবিকের পাশাপাশি আরও ৫০ জন জলদস্যু রয়েছে। এমন অবস্থায় জাহাজে রক্ষিত খাবারের পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে নাবিকদের। কারণ, খাবার শেষ হয়ে গেলে অনেক সময় জলদস্যুরা উপকূল থেকে খাবার নিয়ে আসে। কিন্তু খাবার পানি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা থাকে না,' বলেন তিনি।

জলদস্যুরা অনেক সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের (যেমন বিবিসি, সিএনএন) খবর দেখে উল্লেখ করে ক্যাপ্টেন ফরিদ বলেন, 'সংবাদমাধ্যমে জাহাজ কর্তৃপক্ষ কী বক্তব্য দিচ্ছে বা কেমন আচরণ করছে জলদস্যুরা তা জানতে পারে।'

তাই গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Iranian Red Crescent says bodies recovered from Raisi helicopter crash site

President Raisi, the foreign minister and all the passengers in the helicopter were killed in the crash, senior Iranian official told Reuters

4h ago