জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন: আইন লঙ্ঘন করে ডিএসসিসির সার্ভার, দক্ষিণের বাসিন্দাদের ভোগান্তি

বিরোধের জেরে গত বছরের জুনে ঢাকা দক্ষিণের বাসিন্দাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চার মাসের জন্য বন্ধ থাকে।

বিদ্যমান আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে জন্ম নিবন্ধনের জন্য নতুন সার্ভার চালু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ অনুযায়ী, রেজিস্ট্রার জেনারেলের অধীনে স্থানীয় সরকার জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ও এ সংশ্লিষ্ট সনদ ইস্যু করতে পারে।

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালা, ২০১৮ এর ১৯(২) ধারা অনুযায়ী, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করিবার জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয় হইতে সফটওয়্যার নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করিবেন এবং তৈরিকৃত সফটওয়্যারের মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্যসমূহ একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণ করিবে।

জন্ম নিবন্ধন ফি থেকে প্রাপ্ত অর্থ পেতেই ডিএসসিসি নিজস্ব সার্ভার চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা বিধান ভঙ্গ করেছে এবং এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

গত বছরের ৪ অক্টোবর সার্ভার চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ডিএসসিসি ৭৩ হাজার ৯১টি জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু করেছে এবং প্রতিটি সনদের জন্য ৫০ টাকা ফি নিয়েছে।

জন্ম নিবন্ধন থেকে পাওয়া রাজস্ব বণ্টন নিয়ে মতবিরোধকে কেন্দ্র করে গত বছরের জুনে ডিএসসিসি ও রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে ঢাকা দক্ষিণের বাসিন্দাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চার মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।

দ্বন্দ্বের মধ্যেই জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করতে নিজস্ব সার্ভার চালু করে ডিএসসিসি।

গত বছরের ডিসেম্বরে তৎকালীন রেজিস্ট্রার জেনারেল রাশেদুল হাসান অবসরে যাওয়ার আগে গত বছরের ১৯ অক্টোবর ডিএসসিসির বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার বিভাগে আপত্তিপত্র পাঠান।

এতে তিনি বলেন, মৃত্যু ও জন্ম নিবন্ধনের কাজ রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের আওতাধীন। সুতরাং ডিএসসিসির সার্ভারে এ সংক্রান্ত যেকোনো কাজ আইন ও বিধানের লঙ্ঘন।

তবে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, 'নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে আমরা আমাদের নিজস্ব সার্ভারে নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করেছি। রেজিস্ট্রার জেনারেলের সাধারণ সার্ভারে ইনপুট দেওয়া কঠিন ছিল।'

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাশেদুল হাসান বলেন, 'আমরা অন্যতম সেরা সার্ভার নিয়ে কাজ করছি। অনেক সময় অতিরিক্ত চাপের কারণে তা ধীর হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আর কারও কোনো সমস্যা হয়নি। শুধু ডিএসসিসির এই সমস্যা হবে কেন?'

এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিবাহ নিবন্ধন, জমি রেজিস্ট্রেশন, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র প্রাপ্তিতে ডিএসসিসির জন্ম নিবন্ধন সনদ অকার্যকর প্রমাণিত হওয়ায় নতুন করে জটিলতা দেখা দেয়।

বাসিন্দারা ডিএসসিসির সার্ভারের মাধ্যমে পাওয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে অন্য কোনো পরিষেবা পাচ্ছেন না বলে ইতোমধ্যে অভিযোগ এসেছে।

সেখান থেকে নেওয়া জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্য সমন্বিত সার্ভারে না পাওয়ায় আবেদন ফেরত দিয়েছে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তর।

ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, এ প্রতিবন্ধকতা নিরসনে ডিএসসিসি গত বছরের ১৮ অক্টোবর দুটি সরকারি অফিসে একটি চিঠি পাঠিয়ে ডিএসসিসির সার্ভারে প্রবেশ করে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানায়।

তিনি বলেন, পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে আমরা পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা আবার বৈঠক করব।

রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. যাহিদ হাসান বলেন, ডিএসসিসি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালা ভঙ্গ করছে। ডিএসসিসির কারণে সৃষ্ট এই সংকট নিরসনে জনগণ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

'তবে তাদের তথ্য আমাদের মূল সার্ভারে না থাকায় আমরা কিছু করতে পারছি না', বলেন তিনি।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, 'যেহেতু জন্ম নিবন্ধন আইনে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেহেতু ব্যক্তিগত সার্ভারে অন্য কেউ করলে সেটা অবশ্যই আইনের লঙ্ঘন।'

'তবে ডিএসসিসি নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে এটি করেছে। তাই আমরা তাদের সার্ভারে নিবন্ধিত জন্ম নিবন্ধনকে মূল সার্ভারের সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা করছি', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago