ড. ইউনূসের কারাদণ্ড নিয়ে যা আছে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে

ড. ইউনূসের কারাদণ্ড নিয়ে যা আছে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে
শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদন | ছবি: স্ক্রিনশট নেওয়া

শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদন এসেছে আন্তর্জাতিক প্রায় সব গণমাধ্যমে। ১ জানুয়ারি এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এপি ও ওয়াশিংটন পোস্টও।

এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশের শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির ঢাকার একটি শ্রম আদালত।'

'দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করার জন্য ক্ষুদ্রঋণ ব্যবহারে অগ্রণী ইউনূস আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। রায় ও সাজার বিরুদ্ধে আপিল করতে ইউনূসকে ৩০ দিনের সময় দিয়েছেন আদালত।'

'ইউনূস প্রতিষ্ঠিত একটি অলাভজনক সংস্থা গ্রামীণ টেলিকম রয়েছে এই মামলার কেন্দ্রে।'

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছে তার উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা 'কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে ইউনূস এবং অপর তিন পরিচালককে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। ইউনূসকে ৩০ হাজার টাকা বা ২৬০ ডলার জরিমানাও করা হয়েছে।'

রায় ঘোষণার পর ড. ইউনূস বলেছেন, 'যে দোষ করিনি, সেই দোষের শাস্তি পেলাম।'

তার এই মন্তব্যসহ রায়ের বিষয়ে ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল-মামুন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী খুরশিদ আলম খানের মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, 'গ্রামীণ টেলিকম দেশের বৃহত্তম মোবাইল ফোন কোম্পানি ও নরওয়ের টেলিকম জায়ান্ট টেলিনরের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের ৩৪ দশমিক দুই শতাংশের মালিক।'

'ইউনূসের পশ্চিমা প্রভাবশালী রাজনীতিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকায়; বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, অনেকে মনে করেন, এই রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।'

ইউএনবির বরাত দিয়ে এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এই সম্ভাবনা নাকচ করে বলেছেন, 'একজন ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কে প্রভাব না পড়াই স্বাভাবিক।'

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে 'কথিত দুর্নীতি ও আত্মসাৎ' মামলাও চলছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'ইউনূসের সমর্থকরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শীতল সম্পর্কের কারণে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।'

'সোমবার এই রায় দেওয়া হলো যখন বাংলাদেশ ৭ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে—যা শেখ হাসিনার চিরশত্রু সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন দেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বয়কট করেছে। দলটি বলছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসন একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে, সে বিষয়ে তাদের কোনো আস্থা নেই।'

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সম্প্রতি ১০০ জনের বেশি নোবেল বিজয়ীসহ ১৭০ জন বিশ্ব ব্যক্তিত্বের চিঠির বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

চিঠির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন' উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'তিনি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের বাংলাদেশে আসতে স্বাগত জানান আইনি প্রক্রিয়া মূল্যায়ন ও ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগের সঙ্গে জড়িত নথি পরীক্ষা করতে।'

গ্রামীণ ব্যাংকের যাত্রা তুলে ধরে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার প্রশাসন ইউনূসের বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত শুরু করে। ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত সরকার দেশ পরিচালনাকালে শেখ হাসিনা কারাগারে ছিলেন। সেই সময়ে ড. ইউনূস একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিলে শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হন, যদিও পরবর্তীতে সেই দল আর গঠন করা হয়নি।

এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'ইউনূস এর আগে দেশের রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করে বলেছিলেন, তারা শুধু অর্থের প্রতি আগ্রহী। শেখ হাসিনা তাকে "রক্তচোষা" বলে অভিহিত করেন এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান হিসেবে দরিদ্র গ্রামীণ নারীদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের জন্য বলপ্রয়োগ ও অন্যান্য উপায় ব্যবহার করার অভিযোগ করেন।'

এতে আরও বলা হয়েছে, '২০১১ সালে শেখ হাসিনার প্রশাসন (গ্রামীণ) ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যালোচনা শুরু করে। ইউনূসকে সরকারি অবসর বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।'

Comments

The Daily Star  | English
China urges US for fair trade talks

China warns countries against striking trade deals with US at its expense

Beijing "will take countermeasures in a resolute and reciprocal manner" if any country sought such deals, a ministry spokesperson said

48m ago