‘বাস ছাড়ার চতুর্মুখী চাপ, কিন্তু যাত্রী নাই’

রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালের কাউন্টার সোমবার সকাল থেকে ছিল ফাঁকা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তোলা ছবি। ছবি: স্টার

চুয়াডাঙ্গা থেকে ছেলে আর স্বামীকে নিয়ে গতকাল ঢাকায় চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন রেখা বেগম (৩৫)। ছেলে ইয়াসিন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে, স্বামী ট্রাকের হেল্পার। আজ আবার ফিরে যাবেন চুয়াডাঙ্গায়। গাবতলীতে বাসের আশায় সকাল ৯টা থেকে বসে আছেন তিনি।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কথা হয় রেখা বেগমের সঙ্গে। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল ট্রেনে করে আসছি। আজকে সকালে কমলাপুরে গিয়ে দেখি ট্রেন ছেড়ে দিছে। সবাই বলল গাবতলী থেকে বাস ছাড়বে। কিন্তু এখানে আসার পর দেখি একটা বাসও ছাড়ে না। ৯টার সময় আসছি সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কোনো বাস পাই নাই। এমনিতে অসুস্থ তার ওপর এত সময় ধরে বসে আছি, আরও খারাপ লাগতেছে।'

'শুনলাম সন্ধ্যার আগে বাস নাই, যাওয়ার জায়গা নাই, তাই এখানেই অপেক্ষা করতে হবে,' বলেন রেখা বেগম।

বিএনপির দ্বিতীয় দফায় ডাকা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর গাবতলীতে দূরপাল্লার বাস টার্মিনাল আজ সকালেও ছিল প্রায় ফাঁকা। যাত্রীর অভাবে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি বলে জানিয়েছেন এখানকার বিভিন্ন কাউন্টারের পরিবহণ শ্রমিকেরা।

গাবতলী বাস টার্মিনালে বাসের অপেক্ষায় মা ও ছেলে। ছবি: স্টার

সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দুই একজন যাত্রীকে বাস টার্মিনালে ঘুরতে দেখা যায়। কথা বলে জানা যায় তারা রাতে কখন বাস ছাড়বে তার শিডিউল জানতে এসেছেন।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে আসা হারুন উর রশিদ (৫০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ছোটভাই মালয়েশিয়া থেকে তিন মাসের ছুটিতে এসেছিল। তাকে এয়ারপোর্টে তুলে দিতে এসেছিলাম। বাড়ি ফিরে যাব তাই গাবতলী এসেছি। কিন্তু কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। তাই রাতে কখন বাস ছাড়বে জানতে এসেছি।

অবরোধের মধ্যে ঝিনাইদহ থেকে কেমন করে এলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শনিবারই তারা বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে এসেছেন যাতে অবরোধে গাড়ির শঙ্কায় পড়তে না হয়।

বাস ছাড়া নিয়ে প্রশাসন, বাস মালিক, পরিবহণ নেতা থেকে শুরু করে চতুর্মুখী চাপ আছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন কাউন্টারের পরিবহণ শ্রমিকেরা।

বাস ছাড়ার বিষয়ে গাবতলীতে একটি বাস কাউন্টারের পরিবহণ শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গাড়ি ছাড়ার চাপ অনেক। গাড়ি তো রেডি আছে কিন্তু যাত্রী না থাকলে গাড়ি কেমন করে ছাড়ব। সকাল থেকে হাতে গোনা দুই একজন এসেছে। কিন্তু দুই-একজন যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার গন্তব্যে যাওয়ার খরচও তো উঠবে না।

পূর্বাসা পরিবহণ কাউন্টারের পরিবহণ শ্রমিক বলেন, দেশের বিভিন্ন রুটে তাদের ২৬টি গাড়ি আছে। কিন্তু সকাল থেকে একটা গাড়িও তারা ছাড়তে পারেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই শ্রমিক বলেন, গাবতলীতে আমাদের ১২ জন স্টাফ, মাজার রোডে আছে আরও ১০ জন স্টাফ। গাড়ি ছাড়লে আমরা পয়সা পাই, না ছাড়লে পাই না। কিন্তু সকাল থেকে তো যাত্রীই নাই। যাত্রী না থাকলে বাস কেমন করে ছাড়বে। একবার আপডাউন ট্রিপে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ আছে। এই টাকাও তো উঠবে না।

সরকার দূরপাল্লার বাসে পুলিশ দেবে, এসকর্ট করবে বলে জানিয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই কর্মী বলেন, সরকার বলেছে ক্ষতিপূরণ দেবে এসকর্ট করবে, পুলিশ পাহারা দেবে... কিন্তু যাত্রী না থাকলে যাব কেমন করে। গাড়িতে আগুন দিলে বা ভাঙচুরে ক্ষতিপূরণ দেবে কিন্তু গাড়ি যাত্রীর অভাবে ছাড়া গেল না এই ক্ষতি আমরা কীভাবে পোষাবো।

মূল সমস্যা হলো যাত্রী না থাকা, বলেন এই কর্মী।

গাবতলী বাস টার্মিনালের জে কে পরিবহনের শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৪০ সিটের বাসের এই পর্যন্ত ৩টা টিকিট বিক্রি হয়েছে। গতকাল একটা বাসও যায় নাই। আজকে গাড়ি ছাড়ার অনেক চাপ আছে ওপর থেকে। যেকোনো একটা বাস ছাড়তে হবে। ২৬ হাজার টাকা আপডাউন খরচ থাকে একটা বাসে। কিন্তু আমাদের এই ক্ষতি নিয়েই ছাড়তে হবে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে যাত্রীদের আসতে বলছি হয়তো সন্ধ্যার দিকে ছাড়ব।

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago