চলনবিল গিলে খাচ্ছে ‘উন্নয়ন’

অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ। ছবি: স্টার

দেশের বৃহত্তম বিল নাটোরের চলনবিলের মাঝখানে অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং কৃষির ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলনবিলে চলমান নির্মাণকাজের মধ্যে রয়েছে একটি হাইটেক পার্ক, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) এবং টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (টিএসসি)। এর পাশাপাশি চলনবিলে একটি মিনি স্টেডিয়াম তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে।

চলনবিলের শেরকোল এলাকার বাসিন্দা আব্বাস আলী বলেন, 'চলনবিলের পানি দুটি চ্যানেল দিয়ে প্রবাহিত হতো। হাইটেক পার্ক নির্মাণের কারণে একটি চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এর ফলে ফসলি জমির বিস্তীর্ণ এলাকা দীর্ঘ সময়ের জন্য জলাবদ্ধ থাকে এবং চাষাবাদে অসুবিধা হয়।'

তেলিগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা মানিক ইসলাম জানান, চকপুর, তেলিগ্রাম, সিধাখালী, বামুনহাট, রাণীনগর, বামনুহাট, বোক্তারপুর, গোয়ালবাটান, বিলভারট ও ভাঙ্গারকান্দি গ্রামের প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

চলনবিল এলাকায় চলমান প্রকল্পের নির্মাণকাজ। ছবি: স্টার

স্থানীয় কৃষক আব্বাস আরও বলেন, 'আমি শেরকোল ও তেলিগ্রাম এলাকায় প্রায় ২৮ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছি। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে জমি থেকে শ্যাওলা ও আগাছা পরিষ্কার করতে এক লাখ টাকার বেশি খরচ করতে হয়েছে।'

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনি বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী এম সরওয়ার জাহান বলেন, 'চলনবিলে অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কাজ চলছে। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'এই ধরনের অপরিকল্পিত কাজের সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।'

নাটোরের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসান সরকার জানান, 'কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণের কারণে জলপ্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।'

যোগাযোগ করা হলে হাইটেক পার্ক প্রকল্পের পরিচালক আ ক ম ফজলুল হক বলেন, 'নির্মাণকাজের কারণে জলপ্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

নাটোর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, 'টিএসসি প্রকল্প শুরু করার আগে তারা একটি সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেন।'

তিনি দাবি করেন, 'আমাদের প্রতিষ্ঠান পানি প্রবাহে কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না।'

টিটিসি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। যোগাযোগ করা হলে গণপূর্ত অধিদপ্তর নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার দেব বলেন, 'প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে আমরা প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কালভার্ট স্থাপন করব। তাই আমাদের স্থাপনার কারণে চলনবিলে কোনো সমস্যা হবে না।'

চলনবিল এলাকায় চলমান প্রকল্পের নির্মাণকাজ। ছবি: স্টার

শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার প্রকল্পের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কারণে চলনবিলের ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাসের ভূঁইয়া দাবি করেন, 'উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলনবিলের পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করবে না।'

তিনি বলেন, 'তবুও, জলপ্রবাহ ও পরিবেশগত সমস্যাকে কেন্দ্র করে কোনো সমস্যা দেখা দিলে আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।'

Comments

The Daily Star  | English

Israeli forces seize Gaza aid boat carrying Greta Thunberg

The British-flagged yacht Madleen, which is operated by the pro-Palestinian Freedom Flotilla Coalition (FFC), was aiming to deliver a symbolic amount of aid to Gaza later on Monday and raise international awareness of the humanitarian crisis there

21m ago