‘পরিবেশ নিয়ে কথা বললাম, মেয়র বললেন ধোলাইখালে চুবাব, চুবানোর সংস্কৃতি আরও অনেকের মধ্যে আছে’

আজ সোমবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন আখ্যান ও সমান্তরাল বাস্তবতা: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাবনা’ শিরোনামের একটি প্রকাশনার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। ছবি: সংগৃহীত

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, 'পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা প্রয়োজন। রাজনৈতিক সদিচ্ছা আসবে রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে। কিন্তু রাজনীতিবিদেরা কোথায়? তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। যারা জনপ্রতিনিধি হবেন, তাদের সঙ্গে জনসাধারণের সংযোগ না থাকলে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে না। তাদের জনগণের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিতে হবে।'

আজ সোমবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের 'বাংলাদেশের উন্নয়ন আখ্যান ও সমান্তরাল বাস্তবতা: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাবনা' শিরোনামের একটি প্রকাশনার অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

বাকস্বাধীনতার প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, 'আমরা যখন পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গেলাম, আমারই নির্বাচনী এলাকার মানুষ, অত্যন্ত স্নেহের পাত্র আমার, মেয়র তাপস; ছোটবেলা থেকে দেখেছি, কারণ, একই পাড়ায় তারা থেকেছে। আমরা সবাই যখন পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গেলাম, তিনি বললেন যে যদি বেশি কথা বলে ধোলাইখালে নিয়ে চুবাব। চুবানোর সংস্কৃতি কিন্তু আবার উনার একার মধ্যে নাই আরও অনেকের মধ্যে আছে। আমরা আরও অনেক জায়গায় শুনেছি। এখন কথা বলতে গেলে যদি চুবানোর ধমক খেতে হয়, আসলে কোন রাজনীতিকের কাছে যাব?

'বাকস্বাধীনতার কথা চলে আসে। এখানে আমরা একটা বই বের করেছি ঠিকই। কিন্তু এর পরিণতি কী হবে জানি না। আজকে বিচারপতি মহোদয় বসে আছেন আমরা তাদের কাছে গিয়েও কতটা ন্যায়বিচার পাবো এগুলো নিয়েও কিন্তু অনেক সমস্যা আছে,' বলেন তিনি।

'এখন কথা বলতে গেলে ফর্মুলা মানতে হয়' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমাদের এখন একটা ফর্মুল হয়ে গেছে। যেটা আমি ভঙ্গ করে ফেলেছি। একটু ভয়ও পাচ্ছি। আমি কিন্তু প্রথমে একটু প্রশংসা করে নিই যে কত উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। সেটা আগে করে নিতে হবে। তারপরে উন্নতির ভেতরে কী অসুবিধা আছে সেটা বলা যাবে। সেটা যদি না বলি তাহলে কিন্তু নিয়ম ভঙ্গ করার জন্য আমি অভিযুক্ত হতে পারি।'

দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়েও কথা বলেন সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, 'স্বাস্থ্যব্যবস্থার নাকি এত উন্নতি হয়েছে যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রশংসা করেছে। কিন্তু যারই অসুখ হচ্ছে এবং একটু সামর্থ্য আছে, আমাদের পরিমণ্ডলে যারা আছেন তাদের দেখি অসুখ হলেই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। তাহলে কাদের জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হলো এবং কী এমন উন্নতি হলো যে যাদের কিছুটা সামর্থ্য আছে তাদের বাইরে চলে যেতে হয়?' সে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল বলেন, 'তিনি তো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছেন নিশ্চয়ই খুবই জোরেশোরে। তিনি নিশ্চয়ই নিজেকে আমাদের চেয়ে অনেক জোরেশোরে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন যে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সৈনিক। তিনি যথাযথ জায়গায় প্রমাণ করতে পেরেছেন যে তিনি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। এজন্যই তিনি উপাচার্য হতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি আবার কী করে 'তালেবানি সংস্কৃতি'তে বিশ্বাস করেন?'

মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের মানুষেরা কোথায়? এ প্রশ্ন তুলে সুলতানা কামাল বলেন, 'যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের দাবি করছে, তাদের নাগরিক হিসেবে চ্যালেঞ্জ করতে হবে নিজেদের তা প্রমাণ করতে। যেগুলো বলে, সেগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে চাই।' ভালো মানুষ যদি চুপ করে থাকেন, তাহলে দুর্বৃত্ত অনেক বেশি শক্তিশালী হয় বলে মনে করিয়ে দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক রেহমান সোবহান, কথাসাহিত্যিক ও বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, সাবেক বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সদস্য ও সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সদস্য সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।

Comments

The Daily Star  | English

Foreign debt repayment surges 25%

Bangladesh’s repayment of foreign loans surged in the first 10 months while the inflow of loans from bilateral and multilateral lenders continued to fall, according to provisional data from the Economic Relations Division (ERD) released yesterday.

2h ago