ভিসা নীতির প্রয়োগ নিয়ে ডেইলি স্টারকে যা বললেন ডোনাল্ড লু

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। ছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপে আজ থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানান, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা এই ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

তিনি বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।

ম্যাথু মিলার বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা বা এ ধরনের বিষয়ে জড়িত থাকা অন্যদেরও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হতে পারে।

এর আগে গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা দেয়। ঘোষণা অনুযায়ী, নির্বাচনে কারচুপি, ভীতি প্রদর্শন এবং নাগরিক ও গণমাধ্যমের বাকস্বাধীনতায় যারা বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে।

এই নীতির আওতায় বাংলাদেশিদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রক্রিয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুর সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টার: নতুন মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় কাদের ফেলা হয়েছে? কতজনকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে? তাদের ভূমিকা ও অবস্থান কী ছিল?

ডোনাল্ড লু: আমরা শুরু থেকেই বলেছি, এই নীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম আমরা প্রকাশ করব না। কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যেকোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য।

আমি এটুকু বলতে পারি যে এই নীতি ঘোষণা করার পর থেকে সার্বিক ঘটনা খুব কাছ থেকে আমরা দেখেছি। সাক্ষ্য-প্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের  সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি।

এই নীতির উদ্দেশ্য হলো, সহিংসতা কমানো এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে এমন যেকোনো কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের গঠনমূলক অংশীদার হওয়া।

এই নীতি অনুযায়ী যাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যরাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন।

ডোনাল্ড লু

ডেইলি স্টার: কেন তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো?

ডোনাল্ড লু: গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে ক্ষুণ্ণ করছেন, এমন যেকোনো ব্যক্তির ওপর এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে এই নীতি অনুযায়ী।

ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সংগঠনের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা থেকে বিরত রাখতে সহিংসতা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বা মতামত প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমের ওপর পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণের মতো কারণে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে।

ডেইলি স্টার: এই নিষেধাজ্ঞা কি তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্যও প্রযোজ্য হবে?

ডোনাল্ড লু: এই নীতি অনুযায়ী যাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যরাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন।

এই নীতি শুধুমাত্র নির্বাচনের দিনের জন্য নয়, বরং সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য প্রযোজ্য।

ডোনাল্ড লু

ডেইলি স্টার: ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে নির্ধারণ করা হচ্ছে কোন প্রক্রিয়ায়? আমরা কীভাবে নিশ্চিত হবো যে এই প্রক্রিয়ায় কোনো ভুল হচ্ছে না?

ডোনাল্ড লু: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষুণ্নকারীদের সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাপক তথ্য এবং প্রতিটি তথ্য প্রমাণ ও পর্যালোচনার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এই নীতির আওতায় কাদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করে। আমরা এই প্রক্রিয়া সরকার, বিরোধী দল ও নিরাপত্তা সংস্থার ওপর সমান ও যথাযথভাবে প্রয়োগ করি।

ডেইলি স্টার: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ এখনো ঘোষণা করেনি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের আগেই কীভাবে এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছেন?

ডোনাল্ড লু: এই নীতি শুধুমাত্র নির্বাচনের দিনের জন্য নয়, বরং সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য প্রযোজ্য। আমরা নির্বাচনের সঠিক তারিখ জানি না, তবে এটা স্পষ্ট যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছে।

বাংলাদেশের বর্তমান ডেঙ্গু সংকট মোকাবিলায় আমরা সহায়তা করছি। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী যুক্তরাষ্ট্র। আমাদের নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব শক্তিশালী ও স্থায়ী। বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী জনসংখ্যাকে জায়গা দিয়েছে এবং এখন পর্যন্ত আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের জন্য সবচেয়ে বড় দাতা।

ডোনাল্ড লু

ডেইলি স্টার: মাত্র কয়েকদিন আগে জি-২০ সম্মেলনে আমরা দেখেছি, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে আলোচনা করেছেন। নিশ্চয়ই এটা যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উষ্ণতার প্রতীক। আপনি কি মনে করেন যে এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ও অস্বস্তি তৈরি করবে?

ডোনাল্ড লু: বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের গতিশীল, শক্তিশালী ও বহুমুখী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন যাত্রায় যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। গত ৫১ বছরে আমরা কয়েক বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছি।

বাংলাদেশের বর্তমান ডেঙ্গু সংকট মোকাবিলায় আমরা সহায়তা করছি। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী যুক্তরাষ্ট্র। আমাদের নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব শক্তিশালী ও স্থায়ী। বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী জনসংখ্যাকে জায়গা দিয়েছে এবং এখন পর্যন্ত আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের জন্য সবচেয়ে বড় দাতা।

গত বছর আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করেছি এবং আগামী ৫০ বছর ও তারপরেও বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার অপেক্ষায় আছি।

বাংলাদেশিরা যা চায়, যুক্তরাষ্ট্রও তাই চায়—একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।

Comments

The Daily Star  | English

Price of garments exported to the US fall

The prices of major garment items exported to the US declined year-on-year in the January­-October period this year as American consumers are yet to recover from heightened inflationary pressures..During the 10 months, the price of men’s cotton woven trousers declined by 7.7 percent, accor

3h ago