৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই ডুবল খুলনা শহর
কয়েকদিনের তীব্র গরম এবং অনাবৃষ্টির পর স্বস্তির বৃষ্টি নেমে এলেও তাতে খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্য মেলেনি খুলনাবাসীর। মাত্র ১ ঘণ্টার বৃষ্টিতেই ডুবে গেছে নগরীর দুই-তৃতীয়াংশ। ফলে গরমের অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেলেও রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
আজ শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। এর পরপরই শহরের নিম্নাঞ্চল হাঁটু থেকে কোমর পানির নিচে চলে যায়। বিকেল সাড়ে ৫টায়ও অনেক এলাকা থেকে পানি নামেনি।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ ডেইলি স্টারকে জানান, শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত মোট ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তবে অল্প বৃষ্টিতেই নগরীর নতুন রাস্তা মোড়, বাস্তুহারা, আবু নাসের মোড়, বয়রা বাজার এলাকা, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল, রয়েল মোড়, আহসান আহমেদ রোড, বাইতিপাড়া, চানমারী, লবণচরা, টুটপাড়া, মিস্ত্রিপাড়াসহ নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ জায়গা পানিতে ডুবে গেছে। জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে বাস্তুহারা ও বয়রার নিম্ন অঞ্চলে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর নতুন রাস্তা মোড় থেকে আবু নাসের হসপিটাল মোড় ও মুজগুন্নি সড়কের অধিকাংশ রাস্তা হাঁটু পানির নিচে।
পানি নিষ্কাশনের নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার না করা, সময়মতো নগরীর ২২ খাল দখল উচ্ছেদ ও সংস্কার না করা, জলাধার দখল ও ভরাট, নদী দখলসহ বিভিন্ন কারণই নগরীতে জলাবদ্ধতার মূল কারণ বলে মনে করছেন নগরবাসী।
খুলনার মুজগুন্নি পার্ক এলাকার মুদি দোকানের বিক্রেতা আসাদুজ্জামান রোকন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃষ্টি শুরু হওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যেই এ এলাকা পানির নিচে চলে যায়। ভারী বৃষ্টি হলে আশেপাশের এলাকায়ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।'
'আজকের বৃষ্টিতে মুজগুন্নি, বাস্তুহারা, বয়রা, রায়ের মহল ডুবে একাকার হয়ে গেছে,' বলেন তিনি।
সিটি কর্পোরেশনের কনজারভেন্সি ডিপার্টমেন্ট নিয়মিত এই এলাকার ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তাছাড়া মুজগুন্নি এবং বাস্তুহারা এলাকার পানি যে পথ দিয়ে বের হয় সেই বাস্তবহারা খাল ও কারিগর পাড়া খাল দীর্ঘদিন সংস্কার না করার ফলে ভরাট হয়ে গেছে। অনেক দখলদার খানের ২ পাশ ভরাট করে খাল দুটিকে প্রায় মৃত বানিয়ে ফেলেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সিটি করপোরেশনের তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ করেছেন খুলনা নগরী ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুজিবুর রহমানও। তিনি বলেন, 'নগরীতে ড্রেন নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে। অথচ বর্ষা হলেই তো আমরা ডুবে যাচ্ছি। তাহলে এই ড্রেন দিয়ে আমাদের কী হবে?'
'ড্রেন নির্মাণের পাশাপাশি খুলনা নগরীর পাশের খালগুলো সংস্কার করা দরকার। খালগুলো দখলমুক্ত করা দরকার। তা না করে শুধু ড্রেন নির্মাণ করলে জলাবদ্ধ থেকে নিষ্কৃতি পাবার কোনো উপায় নেই,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'একটি ড্রেনের সাথে অন্য ড্রেনের সংযোগ নেই, পলিথিনসহ অন্যান্য বর্জে ড্রেনগুলো ভরে গেছে। তাই বৃষ্টি হলেই আমাদের এলাকার প্রায় সবগুলো রাস্তা ডুবে যায়।'
জানতে চাইলে কেসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, 'নগরীর অধিকাংশ ড্রেনের সংস্কার চলছে। এজন্য বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনে দেরি হচ্ছে। তবে কোনো স্থানে জলাবদ্ধতা হলে কেসিসি পানি অপসারণের ব্যবস্থা করছে।'
তিনি আরো বলেন, 'খুলনা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব ও রূপসা নদীতে জোয়ার আসার সময় এবং সেই সময়ে বৃষ্টি হলে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ বর্ষার পানি নিষ্কাশন হওয়ার অন্যতম পথ রূপসা ও ভৈরব নদ।'
Comments