ঋণ নিয়ে সরকার দেশকে ফতুর করে ফেলেছে: মির্জা ফখরুল

আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার রোধে সিটি করপোরেশন ও সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ‍তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই প্রশ্ন তোলেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে 'সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট' শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'ডেঙ্গু একেবারে সমস্ত বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি কিছুক্ষণ আগে আমাদের মহানগরী দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম সাহেবকে হাসপাতালে দেখে আসলাম। ১০৩-১০৪ ডিগ্রি জ্বর, প্লাটিলেট নেমে গেছে। ডাক্তাররা এখন পর্যন্ত ধরতে পারেননি। এটা কি ডেঙ্গু নাকি চিকনগুনিয়া নাকি অন্যকিছু, নাকি করোনাভাইরাস।'

'এই অবস্থা সারাদেশে। কালকে টেলিভিশনে শুনলাম যে, যাত্রাবাড়ীতে এমন একটা ঘর নেই যেখানে ডেঙ্গু রোগী নাই। সিটি করপোরেশন কী করে? কলকাতা তো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'তারপর শুনলাম বিদেশ থেকে ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে এসে সিটি করপোরেশনে চাকরি দেয়, হিট অফিসার। এখন আমরা যে হিটেড হয়ে গেলাম, আমরা এখন ডেঙ্গু-চিকনগুনিয়া-করোনাভাইরাস এসবে আক্রান্ত হয়ে কোনো স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে যে ''হিটেড-বুটেড'' হয়ে যাচ্ছি, এখান থেকে আমাদের বের হতে হবে।'

দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের অনেক নেতা ১০ বছর ধরে জেলের মধ্যে আছে মিথ্যা মামলায়। আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, যুবনেতা সাইফুল আলম নিরব, মোনায়েম মুন্না, এসএম জাহাঙ্গীর, গোলাম মাওলা শাহিন জেলে।'

তিনি আরও বলেন, 'এই ১ মাসে আমাদের প্রায় ৮ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে এবং গ্রেপ্তার করেছে। এটা গণতন্ত্রের লক্ষ্য, সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন লক্ষ্য। আবার ওরা বলে, আওয়ামী লীগ যখন আসে তখন নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। সেই ১৯৭২ সালে থেকে ১৯৭৩ সাল আওয়ামী লীগের সময়ে কেমন নির্বাচন হয়েছে? মেনন ভাইয়ের (রাশেদ খান মেনন) কথা মনে আছে? আপনাদের মনে থাকার কথা যে, কুমিল্লার দাউদকান্দিতে খন্দকার মোশতাক আহমেদকে কীভাবে নির্বাচিত করেছিল। এই ঘটনাগুলো তারা সবসময় করে।'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আওয়ামী লীগের বডি কেমেস্ট্রিতে গণতন্ত্র নেই। একটাই আছে, সন্ত্রাস আর চুরি। আমাদের শ্রদ্ধেয় বরণ্যে নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান বলেছিলেন, ১৯৭৫ সালের আগে এমন লুটপাট হয়েছিল যে, আওয়ামী লীগের নামটাই হওয়া উচিত নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি।'

'আর এই কথা শুনলে ওরা বলে নাকি আমার মুখে বিষ। আমার মুখে বিষ নয়, আমি সত্য উচ্চারণ করি। বাংলাদেশের মানুষ এখন সত্য উচ্চারণ করছে। বাংলাদেশের মানুষ এই ভয়াবহ দানব, যারা আমাদের সমস্ত কিছুকে তছনছ করে দিয়েছে, তাদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে সব বাংলাদেশির কাছে এই আহ্বান জানাতে চাই, দেশকে যদি বাঁচাতে হয়, মানুষকে যদি বাঁচাতে হয়, স্বাধীনতাকে যদি বাঁচাতে হয়, গণতন্ত্রকে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে আর কালবিলম্ব নয়, আর কোনো দ্বিধা নয়। রাস্তায় নেমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এদেরকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট তৈরি করতে হবে।'

বিদেশে অর্থপাচারের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'হঠাৎ করে শুনলাম সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগ। কেন? আমরা শুনতে পাই, সুইস ব্যাংকে নাকি বাংলাদেশিদের টাকা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। হঠাৎ করে আবার শুনলাম, ওখান থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো তুলে নেওয়া হয়েছে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে।'

'দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা বিদেশের ব্যাংকে বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে রাখা হয়েছে, যেখানে জবাবদিহিত করতে হয় না। এখন জবাবদিহি করতে হচ্ছে তো। থলে থেকে কালো বিড়াল বেরিয়ে আসছে। আজকে স্যাংশন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। খুব বলছে, আমরা ভয় পাই না। দেশের মানুষকে তো বিপদে ফেলে দিয়েছেন আপনারা। সামগ্রিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি একেবারে চরম তলানিতে গেছে', তিনি বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'ঋণ করতে করতে তারা প্রত্যেকটা মানুষকে ঋণগ্রস্ত করে ফেলেছে। সাপ্লাইয়ার্সে ক্রেডিটের নামে ঋণ নিয়ে তারা (সরকার) বাংলাদেশকে ফতুর করে ফেলেছে। এরপর তারা বড় বড় গলায় কথা বলে। যারা চোর তাদের গলায় আবার জোর বেশি।'

আগামী নির্বাচন অবশ্যই নির্দলীয় সরকারের অধীনে হতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বারবার করে বলছি, সাংবিধানিকভাবেই এই সরকার অবৈধ। আমি জোর করে এই কথা বলছি। এই সরকারের কোনো অধিকার নেই তাদের অধীনে নির্বাচন করার।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি আওয়ামী লীগ গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের লোকজনের চেহারার দিকে তাকাবেন, তাদের চেহারা বদলে গেছে। যাদের ভালোমতো একটা ঘর ছিল না, তার এখন ৫ তলা বাড়ি। যারা সাইকেলে চড়ত না তারা এখন বিরাট বিরাট দামি গাড়ি চালায়, বিলাসিতার শেষ নেই। আর আমাদের সাধারণ মানুষের অবস্থা বঞ্চিত হতে হতে নিচে নেমে গেছে।'

এনপিপির চেয়ারপারসন ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নজরুল ইসলাম, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

Comments