‘নিরাপত্তাহীনতায় বাংলাদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক ক্রমান্বয়ে প্রস্থান করছে’

সংবাদ সম্মেলনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অন্যরা। ছবি: সংগৃহীত

'নিরাপত্তাহীনতা'র কারণেই বাংলাদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ক্রমান্বয়ে প্রস্থান করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

আজ শুক্রবার সকালে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের এক সংবাদ সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এই অভিযোগ করেন।

ফ্রন্টের প্রধান উপদেষ্টা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, '১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা সব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার লোক একসঙ্গে যুদ্ধ করেছিলাম। পাকিস্তানিদের যে অত্যাচার-নির্যাতন-শোষণ-বর্ণ বৈষম্য, ধর্মীয় বৈষম্যের আলোকে যে আচরণ করত, সেটা সুষ্ঠু রাজনৈতিক রাষ্ট্রের জন্য যথেষ্ট না এবং সেই চেতনাবোধ থেকেই বাংলাদেশ স্বাধীনতার পথে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখলাম যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পালাক্রমে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিশেষ করে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী সেটা হিন্দু সম্প্রদায়, তারা ক্রমান্বয়ে কিন্তু প্রস্থান করছে।'

'অর্থাৎ ১৯৬৪ সালে দাঙ্গায়… মানুষ যেমন দলে দলে একসঙ্গে মিছিল করে দেশত্যাগ করেছে, তা নয়। প্রতিদিনই যাচ্ছে সেটা আমরা হয়তো অনুমান করতে পারছি না। যখন পরিসংখ্যান আসে, পরিসংখ্যান এলে দেখা যায় যে, ক্রমান্বয়ে অর্থাৎ হিন্দু সম্প্রদায়ের সংখ্যা কমতে থাকে। এক সময়ে ৬০ এর দশকে হিন্দু সম্প্রদায় ৩৭ শতাংশ বাংলাদেশে ভূখণ্ডে বাস করত। এখন এটা ১০ এর নিচে নেমে এসেছে। তার মানে এভাবে কমছে, ক্রমান্বয়ে যাচ্ছে।'

এর কারণ তুলে ধরে গয়েশ্বর বলেন, 'সামাজিক নিরাপত্তা, তাদের যে নাগরিক অধিকার সংবিধানে আছে, সেটা থেকে বঞ্চিত এবং প্রশাসনের কাছে কোনো অভিযোগ করলে তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অভিযোগগুলো খুব একটা গুরুত্ব দেয় না এবং এড়িয়ে চলে।'

'আর সংখ্যালঘুদের নাগরিক যে অধিকার আছে, তার নিরাপত্তার বিষয়টা আছে, সেগুলো প্রশাসন তদারকি করে না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা আদালত বলেন আর প্রশাসন বলেন, কোথাও কিন্তু তারা গুরুত্ব পায় না। এক কথায় বলা যায়, বাংলাদেশে পাত্তা পায় না।'

তিনি বলেন, 'আজকে পার্শ্ববর্তী একটি গণতান্ত্রিক দেশ ভারতবর্ষ। আমাদের দেশের হিন্দুরা সেকেন্ড হোম হিসেবে ভারতকে বেছে নেয়। "একটা পূর্বঠিকানা থাকা দরকার, এখানে থাকা যাবে না", এই যে মনোবৃত্তিটা কেন সৃষ্টি হলো? সৃষ্টি হলো এই কারণে যে, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রের ব্যর্থতা, অর্থাৎ রাষ্ট্র সবাইকে এই বাংলাদেশটা যে সবার… এই আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।'

জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উদ্যোগে 'বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ৬ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের বক্তব্য শুধু যথার্থই নয়, বাস্তবে নির্যাতনের মাত্রা আরও ভয়াবহ' শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার।

লিখিত বক্তব্যে বিজন কান্তি সরকার বলেন, 'সম্প্রতি বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বরাবর ৬ জন কংগ্রেসম্যান একটি চিঠি দিয়েছেন…. যাতে বর্তমান সরকারের অস্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ক্ষুণ্ণ করা, ব্যাপক হারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা ও তাদের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্যাতনে বিষয় উপস্থাপন হয়েছে।'

'বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি যদিও প্রকৃত বিচারে এর চেয়েও অনেক বেশি। তবুও কংগ্রেস ম্যানদের চিঠিটিতে এটি আংশিক আকারে ফুটে উঠেছে। তথাপি এটি সত্যের প্রকাশ বলে আমরা মনে করি। এজন্য ৬ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি।'

সংবাদ সম্মেলনে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা, মন্দির ভাঙচুর, ২০১৪ সালে যশোরের অভয়নগরে শতশত বাড়ি, মন্দির, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের হামলা, লুটপাট, ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে, ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর রংপুরের গঙ্গাচড়ায়, ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, সুনামগঞ্জের শাল্লাসহ বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়, 'এসব হামলার ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এমনকি সরকারি মদদপুষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও জড়িত থাকার বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও ওইসব ঘটনার কোনোটিরই বিচার তো দূরের কথা, সুষ্ঠু তদন্ত পর্যন্ত হয়নি। উপরন্তু আমরা দেখেছি ওইসব হামলার ঘটনাগুলোকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক ফায়দা লুটার কাজে ব্যবহার করতে সচেষ্ট হয়েছে।'

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠির বিষয়টি আড়াল করতে ক্ষমতাসীনদের চেষ্টার নিন্দা জানিয়ে বিজন কান্তি সরকার বলেন, 'সরকার ও তার পদলেহি কতিপয় ব্যক্তি এটিকে মিথ্যা বলে প্রচার করে নিজেদের অপরাধকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে তারা প্রকারান্তরে চলমান ফ্যাসিবাদকে প্রলম্বিত করার হীন অপচেষ্টা চালাচ্ছে।'

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এসএন তরুন দের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে ফ্রন্টের উপদেষ্টা নিতাই রায় চৌধুরী, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, তপন চন্দ্র মজুমদার, সুশীল বড়ুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান অপর্ণা রায় দাস, নিতাই চন্দ্র ঘোষ, রমেশ দত্ত, রনজিত রায়, বাংলাদেশ মাইনোরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডলসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

5h ago