তীব্র গরমে ফুটপাতের শরবতে স্বস্তির চেষ্টা, স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখছেন বিশেষজ্ঞরা
প্রচণ্ড গরমে পুড়ছে দেশ। বৃষ্টির কোনো লক্ষণ নেই। মে মাসের শেষ দিক থেকে শুরু হয়েছে এ গরম। এখনো চলছে।
এ অবস্থায় প্রখর রোদ আর তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনমানুষ স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করছেন ফুটপাতের শরবতে। রাজধানীর প্রায় সবগুলো সড়কেই ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। মূলত রিকশাচালক, দিনমজুর ও পথচারীরা ভিড় করছেন সেখানে।
গরমের তৃষ্ণা মেটাতে বিভিন্ন রকম শরবত বিক্রি হচ্ছে ভাসমান দোকানগুলোতে। এর মধ্যে লেবুর শরবতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়াও রয়েছে ইসবগুলের ভুসি, অরেঞ্জ পাউডার, শাহীদানা, অ্যালোভেরা ও উলটকম্বলের শরবত।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ফার্মগেট তেজগাঁও কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে শরবত খাচ্ছিলেন রিকশাচালক আমিনুল হক (৪০)। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আজ সকাল ৯টায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। তখন থেকে এ পর্যন্ত ১২ গ্লাস শরবত খেয়েছি। এখনই একসঙ্গে ২ গ্লাস খেলাম।'
রাত ৮টা পর্যন্ত রিকশা চালাবেন বলে জানান আমিনুল। বলেন, 'প্রচণ্ড গরমে অনেক ঘামছি, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। গরমের কারণে সব খ্যাপ নিতে পারি না। একেকটা ট্রিপ শেষ করে লম্বা সময় বিশ্রাম করতে হয়।'
আমিনুল আরও জানান, সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র ৭৫০ টাকা রোজগার করতে পেরেছেন তিনি। এরমধ্যে ১২০ টাকা শরবতের পেছনেই খরচ হয়েছে। গরম কম থাকলে ১২০০ টাকার মতো আয় হতো।
গত ২ বছর ধরে ফার্মগেট এলাকায় শরবত বিক্রি করছেন শফিকুর রহমান। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গরমের সঙ্গে সঙ্গে এখন শরবতের দোকানও বেড়েছে। এখন এই ফার্মগেট এলাকাতেই ২০টি দোকান আছে। তাই আগের তুলনায় আমার বিক্রি কমেছে।'
শরবতের দাম ও উপকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আগে ৫ টাকা করে প্রতি গ্লাস লেবুর শরবত বিক্রি করেছি। এখন ১০ টাকা রাখি। সবকিছুর দাম বেড়েছে। প্রতি জার পানি ৪০ টাকা করে কিনতে হয়। এছাড়া বরফ, লেবু, চিনি এসবের দামও আছে।'
দিনে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকার শরবত বিক্রি হয় বলে জানান শফিকুর। বলেন, 'ফুটপাতে বসার জন্য চাঁদা ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে লাভ থাকে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা। কিন্তু গতবারের তুলনায় এবারে লাভ কম হচ্ছে। কারণ দোকানের সংখ্যা বেড়েছে।'
মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের ৩ রাস্তার মোড় এলাকার শরবত বিক্রেতা সাজ্জাদ বলেন, '৬/৭ বছর ধরে ফুটপাতে শরবত বিক্রি করি। এখানে মূল সমস্যা প্রচণ্ড ধুলাবালি আর ব্যাপক জ্যাম। একা দোকান সামলানো যায় না। সঙ্গে একজন সহকারী আছে।'
প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার শরবত বিক্রি হয় বলে জানান তিনি। এর মধ্যে সহকারীকে দৈনিক ৫০০ টাকা দেন।
তবে যেখানে-সেখানে গড়ে ওঠা কিংবা ফুটপাতের দোকান থেকে শরবত পানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফুটপাতের শরবতে অবশ্যই স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। এগুলো থেকে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ—টাইফয়েড, ডায়রিয়া, জন্ডিস এসব হতে পারে। ফুটপাতে শরবত খাওয়ার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।'
এক্ষেত্রে বোতলে বিশুদ্ধ পানি বহন করাই সবথেকে ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রায় সারা দেশেই মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আরও কয়েকদিন এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।
Comments