সাড়ে ৪ বছর পর লালদীঘি ময়দানে ফিরছে রাজনৈতিক কর্মসূচি

লালদীঘি ময়দান। ছবি: স্টার

ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দান প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর রাজনৈতিক সমাবেশের পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পেতে চলেছে। রোববার এই মাঠেই সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন দলের চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।

এই মাঠে সবশেষ ২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর সমাবেশ হয়েছিল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের জনগণের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল ওই সমাবেশে।

শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে লালদীঘি ময়দানে একটি সংস্কার প্রকল্প শুরু করে। ৪ কোটি ১৭ লাখ টাকার প্রকল্পটি গত বছর শেষ হয়েছে।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা দাবি আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের ঐতিহাসিক আন্দোলনের বিষয়বস্তু ও ঘটনাকে থিম হিসেবে নিয়ে সংস্কার প্রকল্পটি করা হয়েছে। এই মাঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা ঘোষণাকে স্মরণীয় করে রাখতে তৈরি করা হয়েছে '৬ দফা মঞ্চ' নামের একটি মঞ্চ।

২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার পর, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর উপস্থিতিতে নতুন সংস্কার করা ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানটি এই বছরের ২ জানুয়ারি উন্মুক্ত করা হয়। প্রায় ৫ মাস আগে মাঠটি খুলে দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত এ মাঠে কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ হয়নি।

একটা সময় ছিল যখন এই মাঠে সারা বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতো।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ রাজনীতিবিদ বদিউল আলম বলেন, 'আমরা লালদীঘি ময়দানকে ১৯৬০ এর দশক থেকে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে জেনে এসেছি। তখন থেকেই মাঠটি রাজনৈতিক সমাবেশের প্রতীক হয়ে উঠেছে। যখনই কোনো রাজনৈতিক সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হতো আমরা ভেন্যু সম্পর্কে জানতে চাইতাম না। কারণ আমরা সবাই জানতাম, এটি অবশ্যই লালদীঘি ময়দান হবে।'

লালদীঘি ময়দান। ছবি: স্টার

'আমি আনন্দিত যে লালদীঘি ময়দান রাজনৈতিক সমাবেশের পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পেতে চলেছে', যোগ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, `আমি খুবই খুশি লালদীঘি ময়দানে রাজনৈতিক সমাবেশ হতে যাচ্ছে। রাজনৈতিক সমাবেশ করার জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক মাঠ।'

আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, 'দলের ধারাবাহিক সাংগঠনিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশের আয়োজন করা হবে।'

সমাবেশে বিপুল জনসমাগম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহ আলম বলেন, 'লালদীঘি ময়দানের পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে এটিকে সব রাজনৈতিক দলের সমাবেশের জন্য উন্মুক্ত রেখে। এটি একটি ঐতিহাসিক মাঠ এবং তাই এর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখা উচিত। শুধু রাজনৈতিক সমাবেশই নয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও সেখানে করার অনুমতি দেওয়া উচিত।'

চট্টগ্রাম জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি আবু হানিফ বলেন,'লালদীঘি ময়দান ঐতিহাসিক মাঠ হওয়ায় সব রাজনৈতিক দলের সমাবেশের জন্য উন্মুক্ত রাখা উচিত। আশা করি, প্রায় ৫ বছর পর এই ময়দানে আবার সমাবেশ শুরু হলে বন্দর নগরীতে সুষ্ঠু ও সুস্থ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ধারা ফিরে আসবে।'

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবর রহমান শামীম বলেন, 'শুধু বিএনপি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সমাবেশ করা থেকে বঞ্চিত করতে লালদীঘি ময়দান প্রায় ৫ বছর ধরে সংস্কারের নামে বন্ধ রাখা হয়েছিল।  আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিস্ট সরকার, যারা শুধু নিজেদের স্বার্থ ছাড়া কিছুই বোঝে না। তারা ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দান এতদিন বন্ধ করে রেখেছিল, যাতে আমরা এই মাঠে সমাবেশ করতে না পারি।' 

'যেহেতু মাঠটি এখন উন্মুক্ত, আমরা সামনের দিনগুলোতে এই মাঠে সমাবেশের আয়োজনের চেষ্টা করব। তবে জানি না করতে পারব কি না। কারণ আগে যখন মাঠ উন্মুক্ত ছিল, আমরা এখানে সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন আমাদের বাধা দেয়', যোগ করেন তিনি।

Comments