ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি ত্রাণসহায়তা আবেদন জাতিসংঘের

এ গুরুতর পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জাতিসংঘ ও মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো জরুরিভাবে ত্রাণসহায়তার আবেদন জানিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জরুরি ত্রাণসহায়তা আবেদন জাতিসংঘের
ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জরুরি ত্রাণসহায়তা আবেদন জাতিসংঘের

কক্সবাজারে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বাংলাদেশি নাগরিক ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উল্লেখ করে জরুরি ত্রাণসহায়তার আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী কার্যালয়।

আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে এই সহায়তা চাওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি আরও অনেক বেশি হতে পারতো, তবে ক্ষতি যা হয়েছে তাও ব্যাপক। শরণার্থী শিবিরগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; জরুরি ভিত্তিতে হাজার হাজার মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। 

এ গুরুতর পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জাতিসংঘ ও মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো জরুরিভাবে ত্রাণসহায়তার আবেদন জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল রোববার দুপুরের পর বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্তে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়টি রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর  ওপর সরাসরি আঘাত না হানলেও ভারী বৃষ্টি এবং ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগে প্রবল ঝড়ো বাতাসে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি শিবির ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর নাজুক অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, হাজার হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ঘরবাড়ি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে; বিশেষত টেকনাফ এলাকার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও পার্শ্ববতী বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে।

জাতিসংঘ ও তার অংশীদার বিভিন্ন সংস্থা, সেই সঙ্গে সরকারি সংস্থাগুলো মাঠে রয়েছে; তারা ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীগুলোর কাছে জরুরি ত্রাণসহায়তা পৌঁছে দিতে প্রস্তুত রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরুপণের কাজ দ্রুত চলছে। যেহেতু ঘরবাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাদি ধ্বংস হয়েছে, তাই এই মুহূর্তের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে জরুরি আশ্রয়ণ, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাবার সরবরাহ এবং চিকিৎসা সহযোগিতা ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা।

এ ছাড়া বলা হয়েছে, জাতিসংঘ ও তার অংশীদারদের জোরালো সহযোগিতায়, বাংলাদেশ সরকার শক্তিশালী প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবা ও সম্পদ সংস্থানের ব্যবস্থা করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে জরুরি ত্রাণসহায়তা প্রদানের জন্য ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে চলেছে। যাদের বিশেষ ধরনের ঝুঁকির সম্ভানা রয়েছে অর্থাৎ নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। 

এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সাহসিকতার সঙ্গে সম্মুখসারিতে রয়েছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা; ৩ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন, যারা অগ্নিকাণ্ড, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে তাদের জনগোষ্ঠীকে দুর্যোগের আগে, চলাকালে ও তার পরে নিরাপদে থাকতে সহযোগিতা করার কাজে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রসরঞ্জামে সজ্জিত। যেসব মানুষ ভূমিধ্বসপ্রবণ এলাকায় বাস করেন এবং যাদের বিশেষ ধরনের প্রতিবন্ধিতা রয়েছে, সেসব মানুষকে শিবিরগুলোর ভেতরে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকরা সহযোগিতা করেছেন বলে জানিয়েছে জাতি সংঘ।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, 'বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর প্রস্তুতিমূলক তৎপরতার কারণে অনেক মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও তার সহযোগী সংস্থাগুলো গত সপ্তাহে গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা করে এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখে।'

তিনি আরও বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হাজার হাজার শরণার্থী তাদের আশ্রয়স্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়া কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখেছেন, সেখানে আমাদের জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।'

'জাতিসংঘ ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতার জন্য দাতা সংস্থা, এনজিও এবং সর্বস্তরের নাগরিকদের সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আশু চাহিদা মেটাতে এবং ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার জন্য জরুরি আর্থিক সহযোগিতা এবং ত্রাণসামগ্রী প্রয়োজন। এই বিপর্যয়কর মানবিক সংকটে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না।'

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী আরও বলেন, 'বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয়দাতা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যারা নাজুক অবস্থায় রয়েছেন, তাদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিসাবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া একান্ত কর্তব্য।'
 
চলতি বছরে রোহিঙ্গা মানবিক সংকটে মানবিক সাহায্যের আবেদনের মাত্র ১৬ শতাংশ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছে। তহবিল সংকটের কারণে ইতোমধ্যে খাদ্য সহায়তার ১৭ শতাংশ কাটছাঁট করতে হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অকল্পনীয় মাত্রায় কষ্ট-দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন; মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই এক বিরাট অগ্নিকাণ্ডে কয়েক হাজার শরণার্থী তাদের সব সহায়সম্বল খুইয়েছেন। ঘুর্ণিঝড় মোখা এসে তাদের দুর্ভোগ শুধু বাড়িয়েছে; এ ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন রক্ষাকারী সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের কাজকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

Comments

The Daily Star  | English
Impact of esports on Bangladeshi society

From fringe hobby to national pride

For years, gaming in Bangladesh was seen as a waste of time -- often dismissed as a frivolous activity or a distraction from more “serious” pursuits. Traditional societal norms placed little value on gaming, perceiving it as an endeavour devoid of any real-world benefits.

18h ago