আইন প্রণয়নে বৈধতা দেওয়া ছাড়া আর কিছুর জন্য সংসদ সক্ষম নয়: জিএম কাদের

জিএম কাদের
জি এম কাদের। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যমান ব্যবস্থায় সংসদ আইন প্রণয়নে বৈধতা দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার জন্য সক্ষম নয় বলে বলে আজ জাতীয় সংসদে বলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের।

জাতীয় সংসদে উত্থাপিত সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবটি সংসদে তোলেন।

জি এম কাদের বলেন, 'সরকার আইন প্রণয়নে উদ্যোক্তার ভূমিকা পালন করে। তবে সংসদের সম্মতি ছাড়া কোনো আইন প্রণয়ন সম্ভব নয়। এ কারণে রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে আইন প্রণয়নে সংসদ সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি সরকারি দল সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ। সংসদের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সরকারের যেকোন প্রস্তাবে সরকারি দলের সংখ্যা গরিষ্ঠতা অটুট থাকে। ফলে সরকারি আইনে সরকারি দলের সম্মতি পায়। সরকারি দলের সংখ্যা গরিষ্ঠতার কারণে স্বাভাবিকভাবেই অনুমতি লাভ করে। সংশোধনগুলো গ্রহণ বা বর্জন সরকারের মর্জির ওপর নির্ভরশীল থাকে। সংসদ কার্যত আইন প্রণয়নে শুধুমাত্র সরকারি আইন প্রণয়নে বৈধতা দেয়া ছাড়া আর কিছু করার জন্য সক্ষম নয়।'

১৯৯১ পরবর্তী দেশের প্রায় প্রতিটি সংসদই কোনো না কোনো দল বর্জন করেছে এমনটা জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত যতগুলি সংসদ হয়েছে তাতে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্বকারী আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বর্জন করেছে। এখনো একটি দল (বিএনপি) তার গোষ্ঠীসহ বর্জন করছে।

তিনি বলেন, ৫০ বছরে আমরা  অনেক ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে এসেছি। এখন অনেক পরিপক্ক ও ম্যাচিওর্ড সংসদ বলে আমি দাবি করছি। সেই প্রেক্ষিতে আমরা মনে করি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের একটি সংশোধনী হওয়া আবশ্যক। আমি মনে করি সরকার গঠনের সময়কাল, সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব হলে এবং বাজেট পাস এই তিনটি বিষয় বাদে সংসদ সদস্যদের নিজের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া উচিত। যাতে করে সরকারি দলের সদস্যরা নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি ও বিচার-বিবেচনা এবং এলাকার মতের প্রতিফলন ঘটিয়ে ভোট দিতে পারেন তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

ভারতের মতো আমাদের দেশেও যদি কোন দলের সদস্যদের এক তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় তাহলে তারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান নিতে পারবেন এমন বিধান বাংলাদেশেও থাকার প্রস্তাব করেন তিনি।

সংসদীয় কমিটি কার্যকর করার প্রস্তাব করে বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, সংসদীয় কমিটির প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সরকার ও মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। কিন্তু আমরা মনে করি এই কাজগুলি স্থায়ী কমিটি করতে সক্ষম হচ্ছে না। কারণ তারা সুপারিশ দিতে পারে এবং সুপারিশগুলো যখন দেয়া হয় তখন মন্ত্রণালয় অনেক সময় এই সুপারিশগুলি দেখেও না। স্থায়ী কমিটির সুপারিশগেুলো মেনে নেয়ার তো প্রশ্নই আসে না, বেশিরভাগ সময় বিবেচনাই করে না। আমার প্রস্তাব হলো এটা তাদের একটা সময়ের মধ্যে বিবেচনা করতে হবে। সেটা কমিটিকে জানাতেও হবে।  না হলে যারা দায়িত্বে আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান করতে হবে। 

উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে করে জি এম কাদের বলেন, যে দেশে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী কেন্দ্রীক উন্নয়ন হয় সেদেশকে গণতন্ত্রহীন বলা যায়। অনেকেই উন্নয়নকে গণতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করাতে চাচ্ছেন। কিন্তু উন্নয়ন কখনোই গণতন্ত্রের বিকল্প হতে পারে না। উন্নয়নের বিষয়ে বলা হচ্ছে স্থিতিশীলতা উন্নয়নের সহায়ক। কথাটি সত্য। তবে এটা যারা বলেন তারা সরকার পরিবর্তন না হওয়াটাকে স্থিতিশীলতা মনে করেন। বস্তুত সরকার পরিবর্তন না হলে এক ধরনের স্থিতিশীলতা দেখা যায়। কিন্তু সেটা বাহ্যিক ও কৃত্রিম স্থিতিশীলতা। এই ধরনের স্থিতিশীলতা ভঙ্গুর ও অল্প দিনে এই ধরনের স্থিতিশীলতা অস্থিতিশীলতায় পরিণত হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে স্থিতিশীলতা হলো সরকার পরিবর্তন হলেও দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এর কোনো প্রভাব পড়ে না। স্থিতিশীলতা হলো সরকার পরিবর্তনের সাথে আর্থসামাজিক ও রাজনীতির কোন ব্যাপক পরিবর্তন বা সংকট সৃষ্টি হবে না।

তিনি বলেন, উন্নয়ন অর্থ অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়। অনেকে এই বিষয়টিকে ভুল করেন। অবকাঠামোগত উন্নয়ন উন্নয়নের সহায়ক মাত্র। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে দেশ ও জনগণের সার্বিক জীবনমানের উন্নয়ন। 

জিএম কাদের তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত দ্বিতীয় একটি ডেপুটি স্পিকারের পদসৃষ্টি করে বিরোধী দল থেকে নিয়োগের বিষয়টি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেন। একই সাথে বেসরকারি সদস্যদের বিল সংসদে উত্থাপনের বাধ্যবাকতার প্রস্তাব করেন।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

14h ago